Posts

দোস্ত, বেঁচে থাকার এই তো সময় !

  দোস্ত , বেঁচে থাকার এই তো সময় ! সমরেন্দ্র বিশ্বাস #   ঝড়ের মুখে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে ! ঝড় এসেছে , ঝড় আসছে - ঝড় ! ফেস্টুনটাকে ভাগাতে ভাগেতে তেড়ে আসছে ‘ ধ্বংস করো ’ তীব্র হাওয়া বিপন্ন সময় মানুষদেরকে ঘাড়ে ধরে শিখিয়ে নিচ্ছে – কি করে বেঁচে থাকতে হয় ! - এ সময়ে উচিত আমাদের মাথাগুলোকে সিধা রাখা ! # সমুদ্র থেকে তেড়ে আসছে জলস্রোত চরাচর ভাসিয়ে নিচ্ছে সুনামি , ভেসে আসছে অনেকগুলো লাশ ! চোখের সামনে এইমাত্র দেখলাম একটা মানুষ আঁকড়ে ধরে আছে   টুকরো কাঠ - সে বাঁচতে চায় , হয়তো বেঁচেও যাবে দোস্ত , এ সময় দরকার হিম্মতকে ধরে রাখা । # ধ্বংসের ইতিহাস খুঁজতে এই তো আমি পাগলা ঘোড়ার পিঠে চেপে ঢুকে পড়েছি অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতে ! হোয়ংহো , ইয়াং - সিকিয়াং নদীর দুকূল ছাপিয়ে উঠে আসছে বন্যা , নিখোঁজ মৃতদেহগুলোর শোকে হাহাকার করছে অসংখ্য নরনারী । আমাদের চোখের সামনেই তারপরও নতুন করে ঘর বাঁধছে চীনের সভ্যতা , মানুষেরা হেঁটে যাচ্ছে লংমার্চের পথে ! ওই দেশেরই অভ্যন্তরে জামার হাতের নীচে থাবা ও নখ লুকিয়ে এইমাত্র হেঁটে গেল একদল কর্পোরেট দালাল ! দোস্ত , মাথা ঠান্ডা রাখার এই তো সময় । #

কালপত্র, শিলান্যাস

  কালপত্র , শিলান্যাস সমরেন্দ্র বিশ্বাস # এখন কোন শ্লোগান নয় , এখন কোন আর্তনাদ নয় টাইম ক্যাপসুল কবরে রাখা হচ্ছে ! # কারিগরেরা দারুণ ব্যস্ত , তারা কালের পাথরে খোদাই করছে তীব্র গুনগান , আন্তর্জাল আকাশে শাড়ী পড়া সুসজ্জিত স্ট্যাটিস্টিকসরা উড়ছে ; সুন্দর শব্দবন্ধে লেখকেরা রাঙাছে পোষ্টার কালপত্র লিখে রাখছে রাজসভার যাবতীয় গুনগান । # কেউ লিখছে না বন্ধ কারখানার বিপরীত অনুবাদ , কেউ লিখছে না চিকিৎসাবিহীন মৃত্যুর প্রতিবাদী অভিধান তুমিও লিখো না ভুখা মাঠ , কৃষকের ফাঁসি হে মানুষ , তুমিও শিলালিপির মধ্যে খুঁজো না আর্তনাদ # কেনোনা সামনেই প্রহরী উদ্যত বল্লম নিদ্রাহীন রাজার সন্ত্রাস! # হে মানুষ , চুপ থাকো , সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়াও , তোমরা কি জানো না ? এ সময়ে দেশ জুড়ে রাজকীয় আয়োজন - শিলান্যাসের কাজ চলছে , মাটির নীচে রাখা হচ্ছে কঙ্কালের সোনা য় মোড়া উন্নয়ণের কালপত্র! [কথা - 2023]  

অনেকদিন বাদে জীবনানন্দ

অনেকদিন বাদে জীব নানন্দ সমরেন্দ্র বিশ্বাস   অনেকদিন বাদে জীব নানন্দ এসে নক্ করল আমার দরজায়, বললো - চলো যাই, ঘুরে আসি বৃষ্টি ভেজা হরিদ্রার বনে। ঠিক তক্ষুনিই এসটিডি-তে জরুরি ক্রিং ক্রিং, বললাম - আজ নয়, ঘোরা হবে আরও অন্য কোনো দিন।   তারপর রাত্রি যখন দ্বিপ্রহর, লাশ কাটা স্বপ্ন ভেঙ্গে আমি চোখ মেলি। হেমন্তের জড়তা খোলা জানলায়। জীবনানন্দ ম্লান হেসে মুখ বাড়িয়ে বলল - যাবে নাকি? চোখ রগড়ে দেখি কবিতার পাতাগুলো উড়ে যাচ্ছে কংক্রিটের কোয়াটারের টেরেসে টেরেসে । হেসে ওঠে অন্ধকার, - কবিতা কেউ কি পড়ে? ক্লান্ত চোখে জীবনানন্দ টুকুটুকু হেঁটে গেলো আরো অন্ধকারে; বলে গেলো – তবে আসি আজ।   তারও পরে এক সন্ধ্যায় জীবনানন্দ এসেছিল বেড়াতে,               টুং টাং হাত টানা রিক্সায়। সেদিনও আমি ঘরে নেই, কপাট বন্ধ, হয়তো ডিউটিতে,                      কিংবা ক্লাব-বারে। ফিরে দেখি, শুধু পড়ে আছে তার হাতে লেখা চিরকুট – যদি পারো এসে যেও শিওনাথ নদীটির কাছে, শ্মশানের ধারে,                         সন্ধ্যা সাতটায় ; সঙ্গে নিয়ে এসো তাকে যাকে তুমি ‘বনলতা সেন’ বলো ।   অস্বস্তিকর রাত। তারপ

রমণী, তবু তো শুধুমাত্র রমণী যে নয়

  রমণী, তবু তো শুধুমাত্র রমণী যে নয় [শ্রদ্ধেয় আবুল হাসানের ‘নিঃসঙ্গতা’ কবিতাটির প্রতিপক্ষে দাঁড়িয়ে ] # সমরেন্দ্র বিশ্বাস # খেলাঘরে ম্লান আলো ক্ষয়ে গেলে পরে ঘরে ফিরে একদিন যে মেয়েটি আয়নার মুখোমুখি চেয়েছিল একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী, সে মেয়েকে ডেকে ডেকে নিয়ে গেছে সময়ের উট। # রাজপথে ঘুরে ঘুরে সে মেয়েটি দেখেছে অনেক, জেনেছে সে অবশেষে এ সমাজে অনেকেই আধো অন্ধকারে প্রকৃত প্রস্তাবে তাকে জেনেছে রমণী- গোপন ঘরেতে রাখা বিছানা পত্তর। # রাগে অপমানে সে মেয়েটি তাই পায়ের খুরেতে ভাঙে জলবন্দী কুঁজো আর ঘুমের বাদাম, সমাজ স্বাধীনতা ইত্যাকার শব্দগুলি কাঁসার থালার মতো তার রাগী হাতে ভাঙে খান্‌ খান্‌ । # কারণ, সে চেয়েছিল : বস্তুত রমণী, তবু সে তো শুধু মাত্র রমণী যে নয়, তার চেয়ে বেশী কিছু তাকে আজ জানুক মানুষ। [ কাব্যগ্রন্থ - তবু স্পন্দমান পথ / 1986 ] © biswas.samarendra@

হাড় কিংবা একটি অস্থির কারণ অনুসন্ধানে

Image
  গল্প হাড় কিংবা একটি অস্থির কারণ অনুসন্ধানে সমরেন্দ্র বিশ্বাস # অমর # উনোন সাজাতে সাজাতে সুনীতা চেঁচিয়ে উঠলো , ‘ দাদা , এদিকে দেখে যা না !’ আমি ঘরের ভেতর থেকে বলে উঠলাম ‘ কেন , কি হয়েছে ?’ ‘ দেখেই যা না , কাঠকয়লার মধ্যে কি একটা জিনিষ ?’ অপূর্ব বললো , ‘ দেখেই আয় না । বেশী চেঁচামেচি করিস না । হীরা বা সোনাটোনা হলে সরকার বাজেয়াপ্ত করে নেবে । ’ ওদিক থেকে আমার বোন সুনীতা চেঁচাচ্ছে , ‘ কি বিশ্রী একটা চিজ – আমি ইয়ার্কি মারছি না , এদিকে আয় না । ’ শহর ছাড়িয়ে বহুদূরে একটা প্রত্যন্ত গ্রামে আমি আছি । অপূর্বর সঙ্গে অনেক দিন বাদে দেখা । ও এই অঞ্চলে এসেছে কয়েকদিনের জন্যে ।   সরকারী একটা প্রোজেক্টের তরফে এখানকার আদিবাসীদের উপর একটা সমীক্ষা চালাতে । এটা একটা হদ্দ গ্রাম । ইলেকট্রিসিটি আসে নি । কেরোসিন তেলের লণ্ঠন , না হলে মোমবাতিই ভরসা । ম্লান লন্ঠনের আলোয় একটা ঘরোয়া শীতের সন্ধ্যা । আমি আর অপূর্ব খাটিয়ায় বসে মেজাজে আড্ডা মারছিলাম । শেষ পর্যন্ত সুনীতার চেঁচামেচি শুনে আমাকে উঠতেই হলো । দেখলাম ছোট্ট