অণুগল্প / এমারজেন্সি - সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 

অণুগল্প

এমারজেন্সি

সমরেন্দ্র বিশ্বাস


 

জেলে আর জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। সুপারেন্টেন্ড চিন্তিত। রাজনৈতিক কর্মীরা তো আছেই। এ ছাড়া জেলে এসে ঢুকছে বদমাস, চোর, পকেটমার, ঘুসপেটিয়া, খুনী, আত্মহত্যায় বিফল মহিলা, ধর্ষক, দাঙ্গাবাজ, দেশদ্রোহী - নানা ধরণের লোক!

সুপারেন্টেন্ড নিরুপায় হয়ে জেলের ওভারক্রাউডিং-এর বিষয়টা নিয়ে কারামন্ত্রীর সাথে দেখা করলো। তাকে প্রস্তাব দিলো - কম দোষী বা সাধারণ কয়েদীদের কারাবাসের মেয়াদ কম করে দেয়া হোক। তাতে নতুন কয়েদীদের জেলে জায়গা দিতে সুবিধে হবে

কারামন্ত্রীও চিন্তিত! বললেন - তাড়াতাড়ি ছুটি করানোর ব্যাপারে আইনের কিছু ফ্যাকরা আছে। তবে প্রস্তাবটা ভালো, বিশেষত দেশ জুড়ে যখন এতো এতো কয়েদী! সবাইকে যখন জেলে জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। আমি জানি, শহরের অন্য সব জেলখানাগুলোরও একই অবস্থা। কোন জেলেই পা ফেলার জায়গা নেই!

জেল সুপারেন্টেন্ড কারামন্ত্রীকে বললো - ব্রিটিশ আমলে ভারতবর্ষে সত্যাগ্রহী আন্দোলনের দিনগুলো? তখনকার জেল-ভরো আন্দোলন! সে যুগে কতো কতো মানুষ আইন-অমান্য করে জেল ভরাতে আসতো! এই সমস্যা সমাধানের জন্যে কয়েদীদের হাজতবাসের মেয়াদ কমিয়ে দেয়া হতো। নইলে তখন এতো এতো মানুষকে জেলে জায়গা দেয়া, ম্যানেজ করা কি সম্ভব ছিলো?

কারামন্ত্রী বললো - ঠিকই বলেছো। সে ছিল আলাদা যুগ। তবে এখন কি করা যায়, তা’নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলবো।

কারামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করলো।

সব শুনে প্রধানমন্ত্রী বললো - আরে কারামন্ত্রী! এটা কি কোন সমস্যা হলো? জেলে জায়গা নেই তো কি হয়েছে! তোমাদের ম্যানেজ করতে হবে। দেশের বিপদজনক অবস্থা নিয়ে আমার কাছেও কিছু কিছু খবর আছে। এখন একটাই উপায়। প্রত্যেকটা ঘরকে জেলখানা বানাতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান ভাববে তারা জেল-বন্দী। তখন দেখো, জনগন ভয়ে ভয়ে থাকবে, চাপে থাকবে। বিষয়টা নিয়ে আমিও ভেবে রেখেছি।

-   কি ভেবেছেন?

-   চারদিকে খুব হল্লাবোল চলছে! সেক্রেটারি আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলে দিচ্ছি, শীঘ্রই

বিল আনার ব্যবস্থা করবে। যাতে পুরো দেশটাকেই জেল বানানো যায়!


 

[শতানীক / নববর্ষ ২০২৫]

 

Comments

Popular posts from this blog

জীবন

আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক মাড়িয়ে

দয়াবতী, যাও, ফিরে যাও!