অনন্ত জলশব্দে আমি



সমরেন্দ্র বিশ্বাস
#
অনন্ত জলশব্দে আক্রান্ত আমি 
ঐ অনন্ত ঝর্ণাধারার দিকে  
একবার তাকাচ্ছি , একবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি । 
এমনি করেই পল পল করে খসে পড়ছে সময় 
ধুয়ে যাচ্ছে গোধূলির ম্লান আভা । 
একবার দেখা আর চোখ ফিরিয়ে নেয়ার মাঝে 
একটা নৈঃশব্দ্যের অভিমান সাঁকো বেঁধে থাকে  
যে চোখ আজ দেখছে , সে যদি অন্ধ হয়ে যায় 
যে কান শুনছে সে যদি আর না শোনে 
যে হৃদয় উদ্বেলিত হচ্ছে , তার দোলন যদি থেমে যায় 
তবুও এই জলশব্দ উচ্চারিত হবে , যুগে যুগান্তরে । 
আমরা তো দুদিনের ট্যুরিষ্ট । 
এই গাছ, এই পাহাড়, এই নদী, এই ঝরণা 
এই পৃথিবীর ভ্রমণ তো অন্তহীন ! 
এই অন্তহীনতার মাঝে এক একজন অতিথি এক একটা মুহূর্ত ! 
ভ্রমণের আতিথ্য শেষ হলে 
এ টি এম কার্ড , ডায়েরী , রঙ্গীন রুমাল 
কিছু চিনে বাদামের খোসা ভুল করে এইখানে ফেলে রেখে  
ড্রাইভার অনলের অন্তর্দহন গাড়ী নিয়ে ফিরে যাবো । 
সম্মুখের জলশব্দ এসব কথা জানে কি জানে না
অনন্ত জলশব্দের মায়াবী কুহকে 
একের পর এক 
আমার সামনে উন্মোচিত হচ্ছে এই পৃথিবীর শরীর
তার উত্থান, যোনিস্রোতের নদী, ভূ-ত্বক, বৃক্ষময় রোমকূপ
ইচ্ছার বাষ্পীভবন, কল্পনার ঘনীভূত মেঘ
উন্মোচিত হচ্ছে ঝর্ণা, ধূসর স্তনের মতো উদগ্রীব এই বিন্ধ্যপাহাড় । 
নিস্তব্ধতার জলশব্দে আক্রান্ত আমি  
এই দেহতত্ত্বময় পৃথিবীর বয়স নির্ধারণ করতে করতে  
একসময় আমার যৌবন অতিক্রান্ত করি 
এবং ক্রমশঃ শবদেহে পুঞ্জীভূত হই । 
আমার শবদেহের কণাগুলো জলস্রোতে ভেসে যায়  
পশ্চিমে, দক্ষিণে। 
ক্রমশঃ সমুদ্রজীবেরা আমাকে গ্রাস করে। 
আমি সমুদ্র , প্রবাল কিংবা রঙ্গীন মেঘ হয়ে 
বারংবার এই পৃথিবীতেই ফিরে আসি,  
ঝর্ণা হয়ে জলশব্দে অবিরাম ঝরে যাই । 
পলাশের ফুল হয়ে শুনতে থাকি  
গ্রামগঞ্জের সংকীর্তণ, শৈশবের ভিজে গন্ধ । 
আমার অণু পরমাণুগুলো অসীম আবেগে, আলোড়নে 
এই পৃথিবীতে আবর্তিত হতে থাকে
চার অক্ষরে লেখা আমার নাম  
এই অনন্ত জলশব্দে পাখি হয়ে যায় । 
দশই অক্টোবর দুহাজার ছয়ের বিকেল ধুয়ে যায়,  মুছে যায়
আমার সামনে ঝরতে থাকে এই মহাপৃথিবীর এক মায়াবী জলপ্রপাত । 

[ কাব্যগ্রন্থ - অনন্ত জলশব্দে আমি ]
=== © biswas.samarendra@hotmail.com

Comments

Popular posts from this blog

জীবন

আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক মাড়িয়ে

দয়াবতী, যাও, ফিরে যাও!