আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক মাড়িয়ে
আমার অপমানিত সিঁড়ির
বুক মাড়িয়ে
#
সমরেন্দ্র বিশ্বাস
#
সিঁড়ির নীচে জমাট কিছুটা
রক্ত
– একটা
শিশুর।
সিঁড়ির নীচে জমাট কিছুটা
রক্ত
– একটা
নারীর।
সিঁড়ির নীচে জমাট কিছুটা
রক্ত
– চাষী
মজুরের।
অসংখ্য শিশুর রক্ত
অসংখ্য নারীর রক্ত
অসংখ্য চাষী মজুরের,
সিঁড়ির নীচে জমাট অন্ধকারে
থৈ থৈ করা রক্তস্রোত,
সিঁড়ির উপরে জ্বলে গণতন্ত্রের
প্রদীপ!
#
আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক
মাড়িয়ে
আমাকে উঠতে দাও উপরে – উপরে,
পৃথিবীটাকে দেখবো আজ রাতভর
ছাদের উপর আমি সূর্য উঠতে
দেখবো।
#
ধাপ ধাপ সিঁড়ি।
দাঁড়িয়ে সিঁড়ির মুখে দেশের
তাবৎ নেতা
বিলাচ্ছে আশিষ!
আস্-পাশ ঘিরে থাকে আমলার
দল।
সিঁড়ি জুড়ে ধাপে ধাপে রাখা
আছে
মহামানবের প্রতিকৃতি, ধূপ-ধূনা, আছে পরপর
গান্ধী নেহেরু রেগন।
আরো আছে কোসিগিন, যীশু আর গনেশের
ফটো।
#
আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক
মাড়িয়ে
আমাকে উঠতে দাও উপরে – উপরে,
পৃথিবীটাকে দেখবো আজ রাতভর
ছাদের উপর আমি সূর্য উঠতে
দেখবো।
#
দাঁড়িয়ে সিঁড়ির নীচে আমি
নড়ে উঠি,
একশত বেয়নেট বিদ্ধ করে আমাদের
কম্পমান ছায়া।
দাঁড়িয়ে সিঁড়ির নীচে আমি
গান গাই
তক্ষুনি বিরুদ্ধে বসে কোর্ট
আদালত।
চাপচাপ রক্তস্রোতে ঘৃণাভরে
কেঁপে উঠি,
মুহূর্তেই
কম্পিউটর দিয়ে এঁকে নেয়া
হয়
মস্তিস্কের তরঙ্গের রেখা।
অসহ্য এই স্থিরতা, এই অন্ধকার, এই আক্রমণ!
সহস্র কব্জীর নামে শপথের
অঙ্গীকারে
মস্তিষ্কের স্রোতে স্রোতে
ঢেলে নিতে দাও
জমাট রক্তের রঙ!
#
আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক
মাড়িয়ে
আমাকে উঠতে দাও উপরে – উপরে,
পৃথিবীটাকে দেখবো আজ রাতভর
ছাদের উপর আমি সূর্য উঠতে
দেখবো।
#
দুচোখে স্বপ্নের মতো আজ
কেন ভেসে আসে হিম ভাঙা রাত?
এই মধ্যযামে আজ উঠে যাবো
ছাদে
আর তারপর আমি নাচবো উল্লাসে,
অবশেষে রাত জুড়ে আমার গেলাসভরে
খেয়ে নেবো মদ-
যে মদ বেরিয়ে আসে আমাদের
ঘাম ধুয়ে,
তাজা
উষ্ণ মদ
যে মদ বেরিয়ে আসে আমাদের
ঘিলু ধুয়ে,
তাজা
রাঙা মদ!
আমি মদ খাবো, রাতভর মদ খাবো –
আর বজ্রনিরোধক সূচাগ্র ধাতব
দন্ডে
প্রথম মে দিনের অনুসারে
মেলে দেবো সাথীদের রক্তাক্ত
কামিজ
–
দিগন্তে উড্ডীন যেন জাতির
পতাকা!
#
আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক
মাড়িয়ে
আমাকে উঠতে দাও উপরে – উপরে,
পৃথিবীটাকে দেখবো আজ রাতভর
ছাদের উপর আমি সূর্য উঠতে
দেখবো।
# # #
[ কাব্যগ্রন্থ - তবু স্পন্দমান পথ / 1986 ]
Comments
Post a Comment