মহারাজ তোমাকে আজও ভোলেনি

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

দূরে ব্লাস্টিং-এর আওয়াজ, পৃথিবীকে খুঁড়ছে মানুষ।
সমস্ত গাছগুলি দীর্ঘকায় সৈনিকের মতো স্তব্ধতায় দাঁড়িয়ে আছে
যেন এক্ষুনিই কুচকাওয়াজ শুরু হবে।
এইসব সুসংবদ্ধ সৈনিক বৃক্ষের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছি
আমি মহারাজ!
#
ঢাল তলোয়ার দূরে ফেলে এসেছি আজ
হালকা নীল আকাশ খাটিয়েছে সামিয়ানা
গাছপোকা কিংবা ঝিঁঝিঁরা ধরেছে সানাই।
আমার শরীরে এখন কোনো লং মার্চ নেই, নেই কোন আস্ফালন
এই মুহূর্তে যে কোন মানুষের সঙ্গে
আমি মহারাজ, ভাগাভাগি ভাত খেতে পারি।
#
বাতাস আঁচড়ে দিচ্ছে বন-বালিকার চুল।
ওগো হলুদ মেয়ে, তুমি তো আমারই ছিলে
সেই কবে কতকাল আগে
আমরা দুজনে একই সঙ্গে ঝুলতাম
পাগলা হাওয়ায় ছুটতাম
ঘাসের জঙ্গলে গড়াগড়ি যেতাম।
বালিকা, তুমি আজ কোথায়?
অদলবদলের স্রোতে কোথায় তুমি হারিয়ে গেলে?
#
এই দ্যাখো, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তোমার মহারাজ হেঁটে চলেছে
একা একা সঙ্গী নেই সাথী নেই
শুধু সুন্দর পোষাকের নীচে একটা সিসের ভারি জামা, কিংবা রক্ষাকবচ।
এখনও হয়তো তুমি নীল শাড়ি দুলিয়ে আনমনে হেঁটে যাচ্ছ
যেন এক রাজকন্যা।
মনে কি পড়ে তোমার মহারাজকে
যাকে তুমি চুপি চুপি মুকুট পরাতে।
#
এই অনন্ত বনমালার মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
আকাশে একটা দুটো করে তারা ফুটবে
দূরে বক্সাইটের খাদানে ব্লাস্টিং এর আওয়াজে
আমি থমকে গিয়ে দেখবো
তোমার জেন্টেলম্যান দিনগুলো ক্যালেন্ডারে উল্টো হয়ে ঝুলছে।
#
পথ হাঁটতে হাঁটতে কোন এক স্ট্রীটে
তুমি এখন অসহায় থমকে দাঁড়িয়েছ,
আকাশের তারায় চোখ রেখে
তোমার নাকেও ভেসে আসছে পুরোণো দিনের গন্ধ!
#
হু হু করে বাতাস বইছে।
সরলবর্গীয় অরণ্যের সৈনিকেরা এখন আমার সামনে কুচকাওয়াজ করবে,
আর অক্ষমতার আক্রোশে আমি আদেশ দেব নক্ষত্রকে: ‘নীলডাউন হও।’
তারপর ক্যাম্পে ফিরে গিয়ে আহত সৈনিকের মতো অসহায় পড়ে থাকব
শুধু একটা কথাই বলার জন্যে: ‘মহারাজ তোমাকে আজও ভোলেনি।’
# # #

[ কাব্যগ্রন্থ – পিতৃস্মৃতি, উদ্বাস্তু শিক্ষিকা ও অন্যান্য কবিতা ]
Picture- Taken from Internet.



Comments

Popular posts from this blog

জীবন

আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক মাড়িয়ে

হীরাকুদ, উৎপল সেন ও আমাদের অগ্রজেরা