বিপর্যয়, প্রতিদ্বন্দ্বী মানুষ ও প্রার্থিত শুভচেতনা
বিপর্যয়, প্রতিদ্বন্দ্বী মানুষ ও প্রার্থিত শুভচেতনা
সমরেন্দ্র বিশ্বাস
#
করোণা মহামারীতে বন্ধ
হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের কাজ চাই, হাওড়া ব্রীজের উপর দিয়ে পাঁচশো
মানুষের মিছিল চলেছে, – ধরা যাক, ঠিক তখনই হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়লো গোটা ব্রীজটাই!
কিংবা রিখটারের উঁচু মাত্রায় ভূকম্পন। রাতের বেলায় গোটা শহীদ মিনারটাই
উপড়ে পড়লো মাটিতে। ওর চাতালের
আসে পাশে ঘুমাচ্ছিল একদল মানুষ, সকালের বাবাঠাকুরের মেলায়
যাবে বিহারের লোকগুলো, ওদের আর মেলায় যাওয়া হলো না। ভূমিকম্পে উপড়ে যাওয়া বিশাল একটা
মনুমেন্টে পিষে গেছে অনেকের শরীর! বীভৎস সে দৃশ্য। এমন ভূমিকম্পে কোলকাতার পুরো
ভূগোলটাই পালটে যেতে পারে।
এ
সব তো অনুমানমাত্র। ক’দিন আগেই আমরা দেখলাম কোলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে লন্ডভন্ড করে চলে গেল
কি একটা ঘূর্ণি ঝড় – নাম আম্ফান! কেন এমন
সব ঘটনা হয়? কি বলবেন এগুলোকে – দুর্যোগ
না কি বিপর্যয়?
দুর্যোগ
হচ্ছে প্রকৃতি বা মানবসৃষ্ট এমন একটি ঘটনা যাতে মানুষের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির
সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে যদি মানুষের জান-মালের ক্ষতি না করে, তাহলে তা দুর্যোগই (hazard) থেকে
যায়; কিন্তু তা যখন মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি
করে, তখন তাকে বলা হয় ডিজাস্টার (disaster)- বিভিন্ন বিজ্ঞজন প্রদত্ত
সংজ্ঞা অনুসারে ডিজাস্টার-এর বাংলা
প্রতিশব্দ হিসেবে ‘বিপর্যয়’ শব্দটাই বেশী
মানানসই এবং গ্রহণযোগ্য। প্রকৃতপক্ষে দুর্যোগ ও বিপর্যয় একই কার্যকারণের ভিন্ন
ভিন্ন ফলাফলের নাম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঘূর্ণিঝড় যত
শক্তিশালীই হোক, তা যখন গভীরসমুদ্রে অবস্থান করে, তখন তাকে আমরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বলি। কিন্তু যখন ঐ ঘর্ণিঝড়টি জনবহুল উপকূলে আছড়ে পড়ে মানুষের
জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে ফেলে, তখন তাকে আমরা ঘূর্ণিঝড়জনিত বিপর্যয় বলি। একইভাবে বিজন মেরু বা মরু
এলাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও প্রাণহানির আশঙ্কা নগণ্য, কিন্তু
তা যদি কোনো ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলে ঘটে তাহলে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
হবে। এজন্যই বলা যায়, দুর্যোগ ও বিপর্যয় একই কার্যকারণের
ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল। (1)
আমাদের আলোচনা মূলতঃ বিপর্যয় নিয়ে। এই লেখাটার সূচনায় উল্লিখিত ঘটনাগুলো
সমাজ জীবনে ঘটুক, আমরা তা চাই না! মানুষের স্বাভাবিক বেঁচে থাকা, সমাজ, গাছপালা, বিভিন্ন প্রাণীজীবন, জল
হাওয়া সমুদ্র মাটি – এগুলোর বিপন্ন হোক , তাও আমরা কখনোই চাই না।
অথচ
বিপর্যয় যখন আসে তখন অনেককিছুই তছনছ হয়ে যায়, এক নির্দিষ্ট
নিয়মে এগিয়ে চলা সাজানো গোছানো পৃথিবীটার কোন এক বা একাধিক অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
এই জীবজগতে মানুষই অপেক্ষাকৃত
ভাবে বহুগুন জ্ঞানী প্রানী । তাই
মানবসমাজের প্রয়োজন বিপর্যয় বা ডিজাস্টার সম্পর্কে নিদিষ্ট ধ্যান ধারণা থাকা। বিপর্যয় কত রকমের হতে পারে, কিভাবে ও কতখানি এর মোকাবিলা করা সম্ভব, তা নিয়েও যথেষ্ট
চিন্তা ভাবনা ও সক্রিয়তার প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে মানুষ ও বিপর্যয়
পরষ্পর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, একজন আরেক জনের চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী!
আমরা দেখেছি, বিপর্যয় বা ডিজাস্টারের সময় যখন আসে তখন চারপাশের ব্যবস্থাগুলো, যেমন - যানবাহন, টেলিযোগযোগ,
পরিবহন ব্যবস্থা, খাদ্য সরবরাহ, জীবনদায়ী স্বাস্থ্য পরিসেবা, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো
– এসব অনেককিছুই প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করে না। এর জন্যে বিপর্যয় সম্পর্কে যথেষ্ট
জ্ঞান মানুষদের থাকার দরকার। একে
মোকাবিলার প্রস্তুতি মানব সমাজকেই নিতে হবে।
আত্মরক্ষা
ও সুস্থ জীবনপ্রবাহকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বিষয়টা খুব জরুরী।
এবারে বিপর্যয়ের বিভিন্ন
ধরণ ও চরিত্র নিয়ে কিছুটা ভেবে নেয়া যাক।
বিপর্যয়গুলোকে
মূলত তিনটে বিভাগে ভাগ করা যায়।
১) প্রাকৃতিক বিপর্যয়
২) মানুষের তৈরী বিপর্যয়
৩) কিছু জটিল চরিত্রের বিপর্যয় ……
এবারে দেখা যাক উপরোক্ত
বিপর্যয়গুলো কি কি, বা কেমন হতে পারে।
প্রাকৃতিক
বিপর্যয়
ক) ভূপ্রাকৃতিক (Geophysical) বিপর্যয়।
যেমন – ভূকম্পন, ভূস্খলন, সুনামি,
আগ্নেয়গিরি
খ) জলসংক্রান্ত (Hydralogical) বিপর্যয়।
যেমন
– অতিবৃষ্টি, বন্যা, বরফস্খলন (Avalanches)বা
হিমবাহের ধ্বস
গ)আবহ বা বায়ুমন্ডল জনিত Meteorological বিপর্যয়।
যেমন – সাইক্লোন, ঝড়, সামুদ্রিক বড়ো ঢেউ
ঘ) জীবতাত্বিক বা জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত (Biological) বিপর্যয়।
যেমন – সংক্রামক অসুখ বিসুখ, মহামারী বা এপিডেমিক, পতঙ্গ বা পশুপাখিদের ব্যাপক মৃত্যু, নতুন জীবানুর সৃষ্টি
ও তার দ্বারা সংক্রমণ।
ঙ) জলবায়ু সংক্রান্ত Climatological বিপর্যয়।
যেমন – প্রচণ্ড খরা, দাবানল, প্রাকৃতিক
কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া।
চ) আন্তর্জাগতিক আকস্মিক দুর্ঘটনা – যেমন প্রায় কোটি বছর
আগে মেক্সিকোর উপদ্বীপে যে উল্কাপাত হয়েছিল, সেই উল্কাটির আয়তন
দৈর্ঘ্য ছিল ১০ কিমি, ওই উল্কা পাতে পৃথিবীর উপর যে গহবর তৈরী
হয়েছিল, তার ব্যাস ১৮০ কিলোমিটার! এই উল্কা
পাতে পৃথিবী বিরাট ধাক্কা খেয়েছিল, ধোঁয়া, তাপ, অন্ধকারে চারপাশটা ঢেকে গেছিল। এরকম ঘটনা সৌর মন্ডলের পৃথিবীতে, নয়তো অন্য কোন গ্রহে, একাধিক বার ঘটে গেছে! (2)
মানুষের
তৈরী বিপর্যয়
১) দেশব্যাপী যুদ্ধ, সীমান্ত সংঘর্ষ ।
২)উদ্বাস্তু সমস্যা, বাস্তুচ্যুতি ।
৩) আভ্যন্তরীণ দাঙ্গা বা অন্য কোন কারণে মানুষের মৃত্যু, ঘরবাড়ি, সমাজ ও আর্থিক ব্যবস্থার প্রচুর ভাঙচুর ।
৪) যুদ্ধে পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহার ।
৫) পারমানবিক চুল্লী সংক্রান্ত বিপর্যয় ।
৬) যুদ্ধে রাসায়নিক বা জীবানুবাহী অস্ত্রের ব্যবহার ।
৭) কারিগরী কারণে গুরুত্বপূর্ণ বিশাল বিল্ডিং বা সেতুর হঠাৎ ভেঙ্গে পড়া ।
৮) সন্ত্রাসবাদী হামলা, যেমনটা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে
হয়েছিল।
৯) মানুষের ভুলে বা অবহেলায় বড় অ্যাক্সিডেন্ট বা সামূহিক দুর্ঘটনা, যেমন ভূপালে ১৯৮৪-তে ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার ভয়াবহ
বিষাক্ত গ্যাস কান্ড।
১০) মানুষের তৈরী করা প্রদূষণ ও তার কুফল জনিত বিপর্যয়।
১১) মানুষের জন্যে সংঘটিত প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বা সুস্থিতি বিভিন্ন ভাবে
নষ্ট করা, তার জন্যে ঘটিত বিপর্যয়।
কিছু
জটিল চরিত্রের বিপর্যয়
প্রাকৃতিক ও মানুষের যোগসাজসে
কিছু জটিল চরিত্রের বিপর্যয় তৈরী হয়। সেগুলো কেমন হতে পারে, তা নিয়ে সামান্য ভেবে দেখা যাক।
ক) যেমন ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর। এর কারণগত চরিত্রটা জটিল। প্রাকৃতিক ও খরা জনিত কারণে আগের
বছরগুলিতে শস্য উৎপাদন কম হয়েছিল।
সেই
সঙ্গে ছিল বিশ্বযুদ্ধ ও বৃটিশ শাসন কালের অব্যবস্থা। এই দুর্ভিক্ষের জন্যে অনেকেই
অবশ্য ওই সময়কার বৃটিশ শাসিত দেশের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিকে মূল কারণ হিসেবে গন্য করে। এই মন্বন্তরের শিকার হয় ২০ থেকে
৩০ লক্ষ মানুষ।
বাংলায়
দুর্ভিক্ষের কারণ অনেকটাই এশিয়ার ওপর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব, যার জেরে দেখা দিয়েছিল
ম্যালেরিয়া, অনাহার, এবং অপুষ্টি।
১৯৪৩-এর গোড়ার দিকে সামরিক এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলীর কুপ্রভাব বেশ ভালভাবেই বোঝা
যাচ্ছিল বাংলার অর্থনীতিতে, যার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হয়েছিল
বর্মা থেকে আসা উদ্বাস্তুদের কারণে। এছাড়াও, যুদ্ধকালীন শস্য
আমদানির ওপর নানারকম বিধিনিষেধ জারি করেছিল ব্রিটিশ সরকার, যা
দুর্ভিক্ষের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। (3)
খ) বংশানুক্রমিক অনিশ্চয়তা – বহু বছর
বাদে ভবিষ্যত কালে ঘটতে পারে এই বিপর্যয়। ডারউইন যদিও বলে গেছেন Survival of
the Fittest, তবু তিনি বলে যান নি, হাজার হাজার
বছর পরে মনুষ্যজাতির জিনগত কোন আমূল পরিবর্তণ হবে কি হবে না? আমরা জানি না, মনুষ্যজাতির সামনে এমন কোন জিনগত পরিবর্তনের
সম্ভাবনা আছে কিনা, যে ভবিষ্যতে মানুষেরা তার বংশবৃদ্ধিতে অপারগ
হবে! প্রস্তরীভূত চিহ্ন থেকে এটা প্রমানিত হয়েছে এই পৃথিবীতে
প্রায় ৫০০০০ প্রজাতির প্রানী বিলুপ্তি হয়েছে। (2)
গ) ধনী দরিদ্রের সম্পদের অসামঞ্জস্যও বিপর্যয়ের একটা কারণ
– মানুষের আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের জন্যে প্রকৃতি
কিছুটা দায়ী; সেই সঙ্গে
মানুষ নিজেরাও অনেকখানি দায়ী। দেখা গেছে ধনীদের সম্পদ বাড়বার হার খুব দ্রুত। এটাই মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে বিপর্যয়ের পর্যায়ে- এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী তাত্ত্বিক ডাঃ মুহাম্মদ
ইউনূস। মুহাম্মদ
ইউনূসের মতে সম্পদের কেন্দ্রীকরণ পরিবেশ বিপর্যয়ের মতোই ভয়ংকর। এই ভীতির একটি হচ্ছে পৃথিবী ভৌতিক
ভাবে টিকে থাকবে কিনা!
বিপর্যয়ের
চরিত্র- দ্রুত বা ধীর ?
কিছু বিপর্যয় আসে অত্যন্ত
দ্রুত গতিতে। সেক্ষেত্রে
প্রস্তুতির সুযোগ যথেষ্ট না থাকায় অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়। যেমন ভূমিকম্প, সাইক্লোন, সুনামি এই পর্যায়ে পরে। দ্রুত আসা এই সব বিপর্যয়ে হঠাৎ
করে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় – যাকে CALAMITY বলা হয়!
কিছু বিপর্যয় আসে ঘীর
গতিতে। যেমন – দুর্ভিক্ষ, পৃথিবীর উষ্ণায়ন বা জলবায়ুর পরিবর্তন,
রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ঠান্ডাযুদ্ধ, আভ্যন্তরীণ দাঙ্গা। এগুলোকে ইচ্ছে করলে, বা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। এই জন্যে চাই মানব সমাজের দুরদর্শিতা, একটা সুস্থ প্রশাসনের সক্রিয়তা, সৎ প্রচার ও দীর্ঘস্থায়ী
পরিকল্পনা।
কয়েকটি বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কথা
১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দের চীন
দেশের মধ্য অঞ্চলে (Yangte River Flood of 1931) ভয়াবহ
বন্যা হয়। জুলাই
আগষ্ট মাসে অতিবৃষ্টির কারণে ওই অল্প সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় বন্যার কারণে মধ্য ও পূর্ব
চীনের প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি হয়।
এই
বন্যায় বানভাসি হয় ১৮০০০০ স্কোয়ার কিলোমিটার অঞ্চল, মৃত্যু
হয় প্রায় তিন লক্ষ লোকের।
এই চীন দেশেই ১৯৭৬এ ঘটে যায় এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প,
যা The Great Tangshan Earthquake of 1976 নামে
পরিচিত। এই ঘটনায় প্রায় আড়াই লাখ লোকের মৃত্যু হয়, আহত হয় আনুমানিক
সাত লক্ষ লোক। ওখানকার বেশীর ভাগ ঘর বাড়ী ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
আমরা এখনো ভুলি নি সুনামি-র সেই ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাসের কথা! ২০০৪ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ শে ডিসেম্বর। সুমাত্রার
পশ্চিম উপকূলে ৯.৩ রিখটার স্কেলে সমুদ্রের নীচে যে প্রবল ভূকম্পন হয়, তার থেকেই এই সুনামির উৎপত্তি। এই জলোচ্ছ্বাসে
প্রভাবিত হয় ১৪ টি বিভিন্ন দেশ। সব চাইতে বেশী ক্ষতি হয় ইন্দোনেশিয়ায়, সেখানে মোটামুটি মৃত্যুর সংখ্যা এক
লাখ পঁচিশ হাজার আর নিখোঁজের সংখ্যা প্রায় নব্বই হাজার। সুনামি ঢেউএর
সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ৩০ মিটার। শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু ও নিখোঁজের সংখ্যা মোটামুটি ৩৬
হাজার। এই ঘটনায় সব দেশ মিলিয়ে প্রাণহানি হয় দু’লাখ তিরিশ থেকে দু’লাখ আশি
হাজারের মতো মানুষ। ( 4)
২০২০ খ্রীষ্টাব্দের এই সাম্প্রতিক সময়ে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে চলছে
জীবতাত্বিক (Biological) বিপর্যয় , এক সংক্রামক মহামারী, পেন্ডেমিক – করোণা বা COVID-19 । মানুষের ভয়াবহ মৃত্যু, সামাজিক ও মানসিক সমস্যা, স্বাস্থ্য পরিসেবাগত সমস্যা,
কাজ না থাকা বেকারীর সমস্যা, সর্বোপরি সামগ্রিক
আর্থিক সংকট- এ সবের মধ্য দিয়ে প্রতি মুহূর্তেই আমরা এই বিপর্যয়কর
অবস্থাটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
আমেরিকা
সহ বড় বড় উন্নত দেশগুলিতেও একদম নাজেহাল অবস্থা।
এরই মধ্য দিয়ে কোলকাতা
সহ পশ্চিমবঙ্গকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে গেছে বিশাল সাইক্লোন – আম্ফান। এই বিপর্যয়ের ভয়াবহতা যে কতখানি, ভুক্তভোগী মানুষজনেরাই তা টের পেয়েছেন! ২০২০র ২০শে মে
নাগাদ এই সাইক্লোন, হাওয়ার সর্বোচ্চ গতি প্রায় ১৮৫ কিমি/
ঘন্টা।
পশ্চিমবঙ্গের
কিছু কিছু অঞ্চলে এই সাইক্লোনের জন্যে ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে গেছে। বিপর্যয়ের এই ক্ষয় ক্ষতি মিটতে
লাগবে অনেক অনেক বছর, জীবন নাশের মতো কিছু ক্ষয় ক্ষতি
তো কোনদিনই পুরণ হবার নয়!
একটা
ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের বিবরণ – হিরোসীমা ও
নাগাসাকি
১৯৪৫ সাল। ৬ই আগষ্ট রাত ২টা ৪৫ মিনিট। আমেরিকায় মাত্র কয়েকজনের চোখে
ঘুম নেই। তিনিটি
বিমান পরপর গর্জন করে উঠলো।
এর
মধ্যে একটি বোমারু বিমান, নাম – ‘এনোলা
গে’। তার
পেটে একটি মাত্র বস্তু – আদর করে যার নাম দেয়া হয়েছে
‘লিট্ল বয়’। কেউ জানে না ‘লিট্ল বয়’টি আসলে কি? কর্ণেল টিবেট এবং বোমারু ক্যাপটেন পার্সনই একমাত্র জানে কি ভয়ংকর জিনিষটা তারা
বহন করে নিয়ে চলেছে।
বিমান তখন অনেক উঁচুতে, গতিবেগ ঘন্টায় ৩২৮ মাইল।
পেছনে
পেছনে আসছে দুটো ফাইটার প্লেন।
তখন
ঘড়িতে নটা বেজে পনেরো মিনিট।
দূরে ছবির মতো দেখা যাচ্ছে
হিরোসীমা। শহরবাসীরা
সেখানে নিশ্চিন্ত।
ক্যাপটেন পার্সন সুইচটা
টিপলো। বোমাটা
বেরিয়ে যেতে খানিকটা কেঁপে উঠলো প্লেনটা।
মূহুর্তেই
প্লেনের মুখ ঘুরে গেল অন্য দিকে।
পালাও, পালাও।
হঠাৎ আলোয় আলো হয়ে উঠলো
সমস্ত জগৎটা। সে আলোয়
চোখ যেন ঝলসে গেল। মাটি
থেকে প্রায় ৫১০ মিটার উঁচুতে বিস্ফোরিত হয়েছে বোমটা।
পৃথিবীর বুক থেকে মুছে
গেল একটা জনপদ। তার
নাম হলো হিরোসীমা।
ঠিক তা্র তিনদিন পরে। ৯ই আগষ্ট, ১৯৪৫; সমস্ত জাপানবাসী কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সারা দেশটাই থমথম করছে। তখন বেলা ১১টা বেজে ২মিনিট।
কে যেন চেঁচিয়ে উঠলো – এইমাত্র নাগাসাকির সঙ্গে আমাদের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ওখান থেকে কোন সারা পাচ্ছি না। না টেলিফোনে, না রেডিওতে।
‘লিট্ল বয়’ নয়। এবারের নায়ক ‘ফ্যাটম্যান’।
মাত্র
স্বল্প সময়ের ব্যবধানে জাপানের দু দুটো শহর পারমানবিক আক্রমণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো।
হিরোসীমায় ঐ সময়ে কতজন
মানুষ বাস করছিল তার সঠিক হিসেব এখনো পাওয়া যায় নি। তবে অনুমান করা হয় বেসরকারী নাগরিক, সৈনিক ও কয়েক হাজার কোরীয় বেগার শ্রমিক
মিলিয়ে মোট জনসংখ্যা ছিল ৩৫০,০০০। এদের মধ্যে ১৯৪৫এর শেষ নাগাদ
মৃত্যু সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৪০,০০০ অর্থাৎ প্রায় ৪০%
লোক মারা যায়।
পরবর্তী
দিনগুলিতে বিকিরণ জনিত নানা রোগে আরো যে কত সহস্র লোক মারা যায় তার হিসেব দেয়া শক্ত।
বিস্ফোরণের সময় নাগাসাকিতে
জনসংখ্যা ছিল ২৮০,০০০। ওদের মধ্যে ৭৪,০০০ অর্থাৎ ২৬% লোক ১৯৪৫ সালের মধ্যে মারা যায়।
বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে
বেশীর ভাগ মানুষ মারা গিয়েছি বাড়ী ঘর চাপা পড়ে, নয়তো আগুনে পুড়ে। এই বিস্ফোরণজনিত বিকিরণের প্রতিক্রিয়া
ছিলো মারাত্মক। এই বিস্ফোরণ
থেকে যাদের দেহে অতিরিক্ত বিকিরণ গিয়ে পড়েছিলো, স্বল্প সময়ের
মধ্যে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শুরু
হয়ে যায় গা গোলানো বমি বমি ভাব।
বিকিরণ
জনিত রোগের এটাই প্রাথমিক উপসর্গ।
পরে
তারা রক্ত বমি করা শুরু করে।
শরীরের
তাপমাত্রা প্রবল ভাবে বাড়তে থাকে।
দেখা
দেয় প্রচন্ড উদরাময়। উদরাময়ের
সঙ্গে রক্ত পড়া। দশ দিনের
মধ্যেই তারা মারা যায়।
দেহে বিকিরণের মাত্রা
কম হলেও দেখা দেয় নানা উপসর্গ।
যেমন
গা গুলোনো, বমি করা, উদরাময়। দাঁতের মাড়ি, নাক এবং জননেন্দ্রিয় থেকে রক্তক্ষরণ। কখনো কখনো মাথার চুল সম্পূর্ণভাবে
পড়ে যায়। রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা অস্বাভাবিক ভাবে কমে আসে, রক্ত বিষাক্ত
হয়। অবশেষে
মৃত্যু।
তখনকার মতো যারা বেঁচে
গিয়েছিল পরবর্তী কালে তাদের অনেকে লিউকোমিয়া বা রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বিস্ফোরণের পরবর্তী সময়ে যে সব
শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তারা অনেকে বংশগতি জনিত রোগের
শিকার হয়। কেউ
হয় বিকলাঙ্গ। কারোর
মাথার আয়তন হয় অস্বাভাবিক ভাবে ছোট! অনেকে জড়বুদ্ধিতে পরিনত হয়।
দেখা গিয়েছে, হিরোসীমা বা নাগাসাকীতে এই পারমানবিক বোমা যে তেজস্ক্রিয় ভষ্ম সৃষ্টি করেছিল,
সেই ভষ্ম দীর্ঘকাল বাতাসে ভাসমান অবস্থায় ছড়িয়ে ছিলো। বাতাসে ভেসে ভেসে ছড়িয়ে পড়েছিল
দূর দূরান্তরে। এমনি
ভাবেই পলে পলে এই পারমানবিক বোমার ফল ভোগ করেছিল পৃথিবীর অগনিত মানুষ।
১৯৪৫ সালে হিরোসীমাতে
যে পারমানবিক বোমা ফেলা হয়েছিল তার বিস্ফোরণ ক্ষমতা ১২ কিলোটন টি এন টি ।
বর্তমান স্ট্রাটেজিক পারমানবিক
অস্ত্রের বিস্ফোরণ ক্ষমতা হাজার হাজার গুন বেশী! এটা অবশ্যই
বর্তমান পৃথিবীর অস্থিত্বের ক্ষেত্রে একটা বিশাল আতঙ্কজনক প্রশ্নচিহ্ন!
বিপর্যয়
কি করে এড়ানো যায়
মানুষের তৈরী বিপর্যয়গুলোকে
এড়ানো সম্ভব হলেও, সব সময় যে সব বিপর্যয়কে এড়ানো
যাবে, তার কোন গ্যারান্টি নেই।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে
আমরা বিশেষভাবে নজরদারি রাখতে পারি, বিপর্যয়ের পুর্বাভাস
এলে নানা ধরণের প্রস্তুতি নিতে পারি, যাতে করে কম-সে-কম ক্ষতি হয়। অন্যদিকে বন্যার মতো কিছু কিছু
প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুষ্ঠ নদনদী পরিকল্পনা, বাঁধ নির্মাণ
– এ সবের মাধ্যমে এড়ানো যেতে পারে।
জীবতাত্বিক বিপর্যয়, যেমন – সংক্রামক অসুখ বিসুখ, মহামারী
বা এপিডেমিক এর জন্যে সরকারী স্তরে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা থাকা উচিত; হাসপাতালগুলোর সেট আপ থাকা উচিত, যাতে সুলভে মানুষদের
চিকিৎসা দেয়া যায়। মানব
সমাজের ভালোর জন্যে জীবতাত্বিক বিপর্যয়, নানা জীবানু,
জিনতত্ত্ব ইত্যাদি – এসব নিয়ে কল্যাণকারী গবেষণা
চালিয়ে যাওয়া উচিত, যাতে করে নতুন নতুন প্রতিষেধক ও ওষুধপত্র আবিষ্কৃত হয়। এইসব গবেষণার উদ্দেশ্য ও তার
সফল প্রয়োগ যেন ব্যবসায়িক লাভের একটা হাতিয়ার না হয়ে ওঠে, সেটাও লক্ষ রাখা দরকার।
অন্য দিকে মনুষ্য-তৈরী বিপর্যয়গুলোকে আনেকটাই রুখে দেয়া সম্ভব; কারণ বিষয়গুলো
মূলতঃ মানুষেরই হাতে।
যেমন
একটা ব্রীজের স্ট্রাকচার নিয়মিত পরীক্ষা করলে, তার যথযথ রক্ষনাবেক্ষন
করলে সেটা কখনোই হঠাৎ করে ধ্বসে পড়বে না। আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করবো, না কি পারস্পরিক যুদ্ধে নিজেদের
রক্তাক্ত করবো – এই সিদ্ধান্তটা নিজেদেরই হাতে। চাইলে মানুষ পৃথিবীর যাবতীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়াতে পারে।
১৯৮৪
এ ভূপালের ইউনিয়ন কার্বাইডে বিষাক্ত গ্যাস কান্ডের জন্যে কোম্পানীর কর্তৃপক্ষই দায়ী – এটা সুরক্ষার ব্যাপারে একটা মানবিক অবহেলা। এর জন্যে ভিন-গ্রহের কোন জীব দায়ী নয়, অল্প কিছু মানুষকেই ভূপালের
এই দুর্ঘটনা ও শত শত প্রাণনাশের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রদূষণ জনিত নানা দুর্যোগের
বিষয়টা মানুষদের নিজের হাতে।
জল
স্থল ও বায়ুমন্ডলের প্রদূষণ মেটানোর জন্যে যথাযথ পরিকল্পনা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা
অনেক কিছু করতে পারি, সেই সঙ্গে নানা বিপর্যয় থেকে নিজেদের
ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে পারি।
বিপর্যয় নিবারণের উপায় হিসেবে আমাদের
উচিত প্রযুক্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি বাছাই করা – যেমন : শক্তির ক্ষেত্রে পারমাণবিক - এর বদলে সৌর
বিদ্যুৎ। নদী ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃহৎ নদী বাঁধ নির্মাণের বদলে Micro Hydel
Project, Water Shed Management ( জল বিভাজিকা প্রকল্প)
ইত্যাদি গ্রহন
করতে হবে। তা না ঘটলে
অপরিকল্পিত প্রকল্পগুলি নিজেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ ঘটিয়েছে - যেমন তেহরি
বাঁধের মতো কিছু প্রকল্প ও কেদার নাথ ও সন্নিহিত পার্বত্য অঞ্চলে উত্তরাখণ্ডের
জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি। বিপর্যয়
এড়ানোর জন্যে এই ভাবনাগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকেই মনে করেন, এ সময়ের ছারখার করে দেয়া সব চাইতে বড় বিপর্যয় হচ্ছে যুদ্ধ – যদি সেখানে পারমানবিক বোমের মতো বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাহলে তো কথাই নেই! আজ থেকে অনেক বছর আগে, ১৯৪৫ সালে, হিরোসীমা- নাগাসাকির
ঘটনায় যে বিপর্যয়ের ধ্বংসাত্মক বর্ণনা এখানে দিয়েছি, তা মানব
সমাজকেই সম্মিলিত ও আন্তর্জাতিক ভাবে রুখতে হবে। এজন্যেই দরকার পৃথিবীব্যাপী সক্রিয়
সামূহিক শুভচেতনা ।
বিপর্যয়ের মোকাবিলার ক্ষেত্রে
বিভিন্ন গনমাধ্যম ও মিডিয়ার বিশেষ ভূমিকা থাকে। তারা বিভিন্ন স্তরের মানুষজনকে
এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে পারে।
যে কোন বিপর্যয়ের মোকাবিলা
করাতে প্রত্যেকটি মানুষের সচেতনতার যেমন প্রয়োজন, তেমনি
প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বেশ কিছু নীতি প্রনয়ণ। সেই সঙ্গে দরকার বিভিন্ন কর্মসূচী
হাতে নেয়া। তাকে
যথাযথ ভাবে পালন করাও একান্ত জরুরী।
বিপর্যয়ের
পরবর্তী ত্রাণকার্য
আগেই বলা হয়েছে, সব সময় যে সব রকম বিপর্যয়কে (বিশেষতঃ প্রাকৃতিক বিপর্যয়)
এড়ানো যাবে, তার কোন গ্যারান্টি নেই। মানুষকে বিপর্যয়ের সাথে যুদ্ধ
করে বেঁচে থাকতে হয়। তাই
বিপর্যয় ঘটে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে ত্রাণকার্যের জন্যে যথাযথ পরিকল্পনা, সাজ সরঞ্জাম, মোকাবিলা করার মতো সুশিক্ষিত লোকজন থাকা
চাই।
এর জন্যে যে কোন দেশেই
বিপর্যয়কে মোকাবিলা করার জন্যে
Disaster Management Team এর ব্যবস্থা থাকে। তবে প্রয়োজনের সময়ে এই টিম কতটা
কার্যকর,
তা নিয়ে সব সময়ে প্রশ্ন থেকেই যায়!
বারবার এই কথাটাই বলা
হচ্ছে,
মানুষকে কম বেশী বিপর্যয়ের সম্ভাবনা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। বলা যেতে পারে মানুষ আর বিপর্যয়
পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। বেঁচে
থাকার জন্যে সম্মিলিত ভাবে মানুষের উচিত এই ক্ষতিকর প্রতিদ্বন্দ্বীর মোকাবিলা করা। অথচ বাস্তব ক্ষেত্রে মানুষ সবসময়
এই মোকাবিলা করার গুরুত্বগুলি ভুলে যার। ভাবতে কষ্ট হয়, মানুষ
নিজেরা নিজেদের মধ্যেই সামান্য কারণে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘর্ষে নেমে পড়ে। মানুষ আদিম কাল থেকেই প্রকৃতির
সাথে লড়াই করে নানা বিপরীত অবস্থার মধ্যে বেঁচে আছে; – অথচ
দুঃখের বিষয় এটাই, ব্যবসায়িক মনোভাবাপন্ন ও প্রতিযোগিতাময় দূনিয়ায়
আজকাল মানুষ আবাহমানকালের এই চরম সত্যটাই দিনে দিনে ভুলে যাচ্ছে।
মানুষ এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ
বুদ্ধিমান জীব, এই প্রমান তখনই তারা রাখতে পারবে যখন সম্মিলিত
ভাবে সুচিন্তিত উপায়ে তারা বিভিন্ন বিপর্যয়কে মোকাবিলার করতে যথেষ্ট পরিমানে সক্ষম
হবে।
(1) সূত্র – Wikipedia
(2) সূত্র – প্রবন্ধ – মানবিক অস্তিত্বে বিপন্নতা
এবং ক্ষীণ নীল বিন্দুটিরও? – ডাঃ সত্যরঞ্জন দাস।[ মধ্যবলয় পত্রিকা - বিশেষ সংখ্যা-২০১৮]
(3) Ref – Indian Express ( i- e Bangla, an Essay by
Ritu Sharma, Date – 28.03.2019
(4) সূত্র – www.livescience.com
(5) বিশ্বাসঘাতক – নারায়ণ সান্যাল
(6) Nuclear Strategy & Common Sense – Luzin
(7) পত্র-পত্রিকা – অনীক, অমৃত, অধুনা ভারত, দেশ।
Date – 25.06.2020 _ R-1
Published in ARATRIK, Kolkata August-2020
Comments
Post a Comment