ভারবাহী
ভারবাহী
# # # #
কোন
দিন সবুজ দ্বীপ সফরের সাধ আমার মায়ের ছিল কিনা জানি না,
যৌবনে
স্বপ্নের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে বাবা সোল্লাসে কোন গান গাইতেন কিনা,
তাও
বুঝে উঠতে পারিনি,
আজ
প্রৌঢ়া নারীর দু’চোখে
যখন বাদামি খড়কুটো বাসা বাঁধে
একজন
বয়স্ক মানুষের সমস্ত আবেগ যখন পাথরের ভারে ঝুলে পড়ে
তখন
তাদের সন্তান আমি কীই বা করতে পারি, একা একা ধূসর রাস্তায় হাঁটা ছাড়া?
#গাধার পোষাক
ধূসর
রোদ্দুরে পিঠে-বোঝা শরীরটার কিম্ভুতকিমাকার ছায়া
যখন
রূঢ় রাস্তায় ঘষটাতে থাকে
মনের
সুকোমল আস্তরণের ছাল-চামড়া উঠে যখন রক্তপাত ঘটতে থাকে
তখন
কেনই বা আমি যন্ত্রণায় কাতর হব?
কারণ
এর জন্য মানুষেরা ভারবহনের নির্ধারিত মজুরি নিয়মিত পায়
যে
মজুরি দিয়ে কেনা হয় মানুষের সামাজিক আবরণ।
বাবা, মা, কেন
তোমরা আমায় শিখিয়েছিলে পোশাকের ব্যবহার?
এই
পোষাক পরতে পরতেই তো তোমরা ভুলে গিয়েছিলে যাবতীয় গান, স্বপ্নের স্মৃতি
এই
পোষাকের উৎস খুঁজতেই খুঁজতেই তো ঠিকানা হারিয়ে আমি পৌঁছে গেছি উলঙ্গের সমাবেশে।
ভারবাহী
আমাদের সন্তানেরা যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবে
সেখানে
কি কোনো স্বপ্ন আবেগে কাঁপবে
সেখানে
কি কোনোদিন সবুজ নির্জনতা হাত নেড়ে বলবে, ‘এসো’
সেখানে
কি কোনোদিনও পোশাক খুলে রেখে আমার সন্তানেরা
আমাকেই
শিক্ষা দেবে, ‘বাবা,
উলঙ্গ হও!’
#রক্তাক্ত স্বপ্ন
ভারবাহী
গাধার পক্ষে পোষাক পালটানো অসম্ভব বলেই সে মাথা ঝাঁকায়
আর
আমিও রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখি
অন্ধ
বেড়ার মধ্যে আটকে পড়ে খামচাখামচি করছে যাবতীয় স্বপ্ন
আমার
সন্তানেরা জবরদস্তি আমার পোষাক ছাড়াতে ছাড়াতে জানিয়ে যাবে সে সব তথ্য
সে
তথ্য মানুষেরা আজও তেমন ভাবে আবিষ্কার করেনি
সে
ভ্রমণ যা আজও পরিপূর্ণ পদচিহ্নে স্পর্ধিত হয় নি
সে
সংগীত যা আজও দিগদিগন্তে জনমানসে শ্রুত হয় নি।
কোনো
দিন সেই সমস্ত প্রহরে আমিও কি পারব তেমন একটা গান গাইতে
যখন
যাবতীয় আবরণ ছিন্নভিন্ন করে ভারবাহী মানুষেরা চিনে নেবে মানুষের প্রকৃত পোষাক।
# # # # #
সমরেন্দ্র বিশ্বাস
[কাব্যগ্রন্থ
– পিতৃস্মৃতি, উদ্বাস্তু শিক্ষিকা ও
অন্যান্য কবিতা]
Comments
Post a Comment