সম্মোহিত কবিতা যাপন
সম্মোহিত
কবিতা যাপন
সমরেন্দ্র বিশ্বাস
#
জঙ্গলের
গন্ধ ছড়িয়ে বন-বাদাড়ের হাওয়ার মতো সে কখনো আমার কাছে তার কবিতা নিয়ে আসে। আমি
জঙ্গলের কাছে গিয়ে দেখি তার চেহারায় অপার্থিব ভয় ও অদ্ভুত শারীরিকতা জেগে আছে। তার
সাথে অনেক কথা হয়; জংলি
গন্ধ ছড়িয়ে সে আমার পাশে এসে বসে। বাইরে চাঁদের আলো আর ঘরের সি-এফ-এল বাল্ব থেকে
অনর্গল ঝরে পরে যাদু যৌনতা। সে আমাকে কবিতার কথা বলে; আমি
কবিতার নিটোল স্তনে হাত রাখার ঈশারা করি। সে আমাকে কলাগাছের বনে প্রেম আর
রোমাঞ্চের কথা বলে। বলতে বলতে আমার হাত তুলে দেয় কবিতার শরীরে, জঙ্ঘা আর জিজ্ঞাসার মাঝামাঝি। কবিতার অক্ষরেরা অসাধারণ কাব্যময়। রোমকূপ
থেকে উদগত পশমের অক্ষরেরা ফর্সা শরীরের মসৃনতায় লগ্ন হয়ে থাকে; আমি বৃষ্টিভেজা সোঁদা মাটির গন্ধে বিভোর হয়ে যাই। সে আমাকে তার নাভিতে যে
কবিতার গন্ধ লেগে আছে তাকে অনুবাদ করতে বলে, আমি একটা শরীরের
ভেতর আরেকটা কবিতার ভাবান্তর ঘটাই, কোন কথা হয় না – শুধু দুজনের দীর্ঘশ্বাস আর আদিম উচ্চারণ কাটাকাটি খেলতে থাকে। তারপর সে
আমাকে নিয়ে যায় আরো এক জঙ্গল ঘেরা গুহায়। সে খুলে ফেলে কবিতার জামা কাপড়; দুচোখে তার যাদু। নির্জন আকাশ আর ভুতুড়ে হাওয়া উড়িয়ে নেয় কবিতার
শাড়ী-ব্লাউজ। তার মেধাবী ভূগোল ও মোহময়ী নিজস্বতা যেন না-দেখা কোন পান্ডুলিপি,
যা সে গোপন রেখেছিলো কোন অজানা সিন্দুকে। সেই পান্ডুলিপি আমাকে
একান্তে পড়তে দিলে আমি আবিষ্কার করি সুপ্ত সুন্দরবনের শরীর, বন-বাদা,
নদীর মোহনা, মৌমাছির গুঞ্জরণ। একটা বাঘের
ক্ষুধার কাছে আমি নিহত হলে, সে আমার চুলে হাত রেখে ঘাসের
মধ্যেই শুয়ে পড়ে। স্বপ্নের মধ্যে আমি শুনতে পাই ঘুমন্ত কেউ আমাকে একটার পর একটা
কবিতা শুনিয়ে যাচ্ছে। আমাকে বারবার টেনে নিয়ে যাচ্ছে নির্জন জঙ্গলের দিকে –
যেখানে যৌন সন্ধ্যা মেলে রেখেছে ম্লান অপার্থিব আলো। এমনি ভাবেই তার
সাথে যাপিত হয় আমাদের সম্মোহিত কবিতার আলো-আঁধারি সন্ধ্যা।
# [গ্রন্থ - অনন্ত জলশব্দে আমি]
# Picture taken from Internet / Paul Gauguin’s Painting
Comments
Post a Comment