ভিলাইতে বাংলা কবিতা চর্চা – সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন
ভিলাইতে
বাংলা কবিতা চর্চা – সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন
সমরেন্দ্র
বিশ্বাস
#
ভিন প্রদেশে বসে যারা
সাহিত্য বা কবিতা চর্চা করেন, তাদের মধ্যে কতগুলো চালিকা শক্তি কাজ করে। যেমন কেউ
কেউ প্রবাসের বিচ্ছিন্নতায় নিজস্ব প্রদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এই
লেখালেখির জগতে আসেন। কেউ বা মনন ও নিজের অবসর চর্চার একটা উপায় হিসাবে এই
লেখালেখিকে বেছে নেন। কেউ বা কোন আদর্শ বা রাজনৈতিক তাগিদে কলম তুলে নেন। পুরো
সময়ের পেশা হিসেবে সাহিত্যকে বেছে নেয়া, প্রবাসে এমনটা কমই দেখা যায়।
বাংলার বাইরে
কবিতাচর্চা নানা জায়গাতেই হয়ে থাকে। ভারতবর্ষ ও ছত্তিশগড়ের বিখ্যাত ইস্পাত শহর ভিলাইও
এর ব্যতিক্রম নয়। বরং সাহিত্য ও কবিতা চর্চায় ভিলাই অঞ্চল যথেষ্ট সক্রিয় ও তৎপর।
একদা মধ্যপ্রদেশ,
অধুনা ছত্তিশগড়ের অন্তর্গত ভিলাই একটা শিল্প শহর। এখানকার মূল কারখানাটি ভিলাই
স্টীল প্লান্ট, যা কিনা অনেকগুলো ফ্যাক্টরি সমন্বিত একটা
ইন্টিগ্রেটেড(সংযুক্ত)প্লান্ট। তাছাড়া এখানে
আরও অন্যান্য কিছু কল কারখানা রয়েছে। রুখা শুখা গ্রামগুলিকে সরিয়ে দিয়ে তখন ভিলাই
স্টীল প্লান্ট তৈরী হচ্ছে, সেসব ১৯৫৭ ও তার পরবর্তী সময়ের কথা। তখন থেকেই
এখানে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে
রাখতে গঠিত হয় ভিলাই বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থা ও অন্যান্য কিছু বাঙ্গালী সংগঠন। এদের
হাত ধরেই এখানে সাহিত্য ও কবিতা চর্চার বিকাশ। বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থা, ভিলাই, সংগঠনটি
শ্রী শিবব্রত দেওয়ানজী ও আরো কিছু মানুষের সহায়তায় এখনো বেশ সক্রিয়। এখান থেকে
কিছুটা দূরে রেল শহর বিলাসপুর, ১৯৮১ সালে সেখানেও সামাজিক আদর্শ কিংবা কোন
রাজনৈতিক তাগিদে ডাঃ পূর্নেন্দু ঘোষের অনুপ্রেরণায়, সেতু সাহিত্য পরিষদের
তত্বাবধানে শুরু হয় “সেতু” পত্রিকা। পরে
এটাকে টিকিয়ে রাখার তাগিদে মধু ভট্টাচার্যের প্রচেষ্টায় “সেতু”র কাজকর্ম ভিলাইতে
স্থানান্তরিত হয়। অবশ্যই ভিলাই সাহিত্যচর্চার
আদি দিনগুলোতে আরো কয়েকটা ক্ষণজীবি বাংলা পত্রিকা ছিলো, যেমন – অঙ্কুর, অভ্যুদয়,
কৃষ্টি, জাগৃতি – কিন্তু সেগুলোর কোনটাকেই বেশী সময় ধরে চালানো যায় নি। এখানে (সন্নিহিত
দুর্গ শহরে) অল্প কিছু দিনের জন্যে সাহিত্য মজলিস-এর উদ্যোগে নিয়মিত বেরিয়েছিলো
সিতেস রায় সম্পাদিত “সংস্কৃতি” পত্রিকা, পরে যা কোলকাতায় স্থানান্তরিত হয়ে যায়।
বর্তমানে ভিলাই থেকে
নিয়মিত বের হচ্ছে শিবব্রত দেওয়ানজী সম্পাদিত বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থা (ভিলাই) এর
মুখপত্র “মধ্যবলয়” পত্রিকা ও কিছুটা অনিয়মিত ভাবে মধু ভট্টাচার্য সম্পাদিত “সেতু”
পত্রিকা । বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে নানা পত্র পত্রিকার সঙ্গে ভিলাইএর মানুষজনের যোগাযোগের ব্যাপারগুলো আজকাল
অনেক সহজ হয়েছে। তাছাড়া বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থা (ভিলাই) এর তত্বাবধানে নিয়মিত হয়ে আসছে
সাহিত্যের ঘরোয়া সভা। এইসব সাহিত্যসভা, ভিলাইএর ছাপা পত্রিকা, বঙ্গ সহ অন্যান্য
প্রদেশের সঙ্গে সাহিত্যিক যোগাযোগের মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলেছে ভিলাইএর বর্তমান সাহিত্য
ও কবিতা চর্চা।
ভিলাইএর কবিতা চর্চার
ইতিহাস অনেক পুরোণো – এখানকার কবিতা চর্চার ইতিহাসে যাদের নাম উঠে আসে , তারা হলেন
ক্ষিতীশ দেব সিকদার, রবীন্দ্র গুহ, ফনী রায়, সুধাংশু সেন, নিখিল ঘোষ, শঙ্কর
চক্রবর্তী, হরিগোপাল চৌধুরী, নিরঞ্জন চক্রবর্তী, সোমনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ। এদের কেউ
কেউ এখন ভিলাই ছেড়ে অন্যত্র থাকেন, কেউ লেখা ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ প্রয়াত। সীমিত পরিসরের বর্তমান লেখাটায় ভিলাইয়ের সঙ্গে যুক্ত
কয়েকজন মাত্র কবি ও ব্যক্তির কথা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
ভিলাইএর কবিতা চর্চার
কথা বলতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে ক্ষিতীশ দেব সিকদারের (জন্ম-১৯৩৫) নাম। ভিলাইএর
চাকুরী থেকে অবসর নেয়ার পর উনি এখন কোলকাতাবাসী। তার কবিতায় রয়েছে বাস্তব জীবন,
সুপ্ত কাব্যিকতা, দৃঢ় সমাজচেতনা, রাজনীতি বোধ। যেমন, ওনার একটা কবিতা ‘ যুবকের/
জ্বলজ্বলে চোখে তুমি গেঁথে দিলে তীর/ ...... কতটা হিংস্রতা ছিল তীরে/ কতটা নিশানা
ছিল তীরে/ কিছুই বোঝার আগে/ ধরাশায়ী যুবকের মৃতদেহ দাহ করে ফিরে এলো শ্মশানবন্ধুরা/
সেইখানে/ যেখানে পথের ধারে রাশি রাশি ফুটন্ত পলাশ।’(অনুভব)। এতো বয়সেও সক্রিয় তার কলম। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি লেখেন-
‘দেখলাম হু হু আগুনের মধ্যে অমর প্রতিভা পুড়ছে,/ দেখলাম আগুনের চারপাশে প্রকৃতির
হৃদয় বিদীর্ণ হাহাকার,/ ক্ষিতীশ! ক্ষিতীশ!’(আত্মপরিচয়)- এ কবিতা পড়তে পড়তে আমরা
স্তব্ধ হয়ে যাই!
ভিলাই এর বাংলা কবিতা
চর্চায় শিবব্রত দেওয়ানজীর (জন্ম-১৯৩৫)নাম ভীষণ ভাবেই উল্লেখযোগ্য। বহির্বঙ্গ
ভিলাইতে কবিতা চর্চার এই যে বিশাল আয়োজন , তার পেছনে এই মানুষটির সক্রিয় অবদান
সবাই মনে রাখবে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তিনি এখনও অনবরত লিখে চলেছেন। ইতিমধ্যেই
কবিতা, গদ্য, স্মৃতিকথা এসব মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা পনেরোর কাছাকাছি।
সাহিত্যকে রুখাশুখা এই বহির্বঙ্গের মাটিতে
টিকিয়ে রাখার ব্রত নিয়ে শিবব্রতদা লেখেনঃ ‘শব্দ হচ্ছে পায়ের তলায়/ ঠিক সবই আছে,
শুধু মানুষ সরে যাচ্ছে/ মাটি থেকে অনেক দূরে (মাটি ও আমি)।’ তখন বুঝি পায়ের তলার
মাটি যেন না সরে যায়, তার জন্যেও কবিকে সচেষ্ট থাকা উচিত। কবিতা লেখার তীব্র আকুতি
ঝরে তার কলমেঃ ‘রোজই কবিতা আমাকে পোড়ায়/ আমার কিবা করার আছে/ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
কবিতার আগুনে পুড়ি/ আমি চাই না কেউ আমাকে বাঁচাক (কবিতা)’। সবাইকে কবিতা দিয়ে
একসাথে করবার জন্যেই বিভিন্ন প্রদেশের কবিদের নিয়ে উনি দুলাল সমাদ্দারের সংগে যৌথ
সম্পাদনায় ভিলাই থেকে প্রকাশ করেছেন একটি উল্লেখযোগ্য বই “সারা ভারত বাংলা কবিতা
সংকলন” (প্রকাশকাল-২০১০)।
দুলাল সমাদ্দার(জন্ম-১৯৫৫), ভিলাই স্টীল
প্লান্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এখন অবসর নিয়েছেন। দুলালের লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়
বাংলা আধুনিক কবিতার রূপ রস ও গন্ধ। তার কবিতায় আসে সুন্দর সুন্দর সব চিত্রকল্প।
যেমন- ‘দৃষ্টিতে ধূসর প্রেতচ্ছায়া/ সম্বোধনে দূরত্বের হিম ( অচেনা মুখ)’। প্রথগত রুটিনমফিক দাম্পত্যজীবনের ছবি দুলাল লেখে নিরুত্তাপ
সংলাপের ঢঙ্গে - ‘অজস্র গিঁট পড়া সুতোর দুপ্রান্তে/ আমাদের শিথিল অবস্থান/ আমরা
এভাবেই সুতোটাকে টিকিয়ে রাখি/ নিজেদের ছিঁড়তে ছিঁড়তে ( দাম্পত্য)’। কবিতায় আরও একটা অসাধারণ চিত্রকল্প- ‘সারাটি রাত চুপি চুপি
প্রত্ন চাঁদের চাকা/ গড়ায়, তবু দেয়না ধরা শান্ত পরিত্রাণ।’ নিঃসন্দেহে বলা যায়
ভিলাইএর আধুনিক বাংলা কবিতার পরিমন্ডলে দুলাল সামাদ্দার একটি উল্লেখযোগ্য নাম।
দুলালের সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ “ফার্ণেসকে জাগিয়ে রাখো দোস্ত!”-এতে শ্রমজীবন ও
কলকারখানারা কিছু কিছু টুকরো নিপুন ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, যা শিল্পনগরীর কবিতায় এক
বিশেষ প্রাপ্তি।
ভিলাইতে মহিলা কবিদের
মধ্যে এখন যারা নিয়মিত বাংলা কবিতা চর্চা করছেন তারা হলেন ইন্দ্রানী দাস, বাণী
চক্রবর্তী, স্মৃতি দত্ত, মিতা দাস, দীপালি দাশগুপ্ত, বন্দনা সিনহা, গীতা দেব সিকদার
প্রমুখ। প্রবাসের বিচ্ছিন্নতায় বাংলা
সাহিত্যকে জাগিয়ে রাখার কাজ এনারা করে যাচ্ছেন। তবে এখানকার প্রয়াত এক মহিলা কবির
কথা একটু বলতে চাই, তিনি ইলা মুখোপাধ্যায় ( মৃত্যু - ২০জুন-২০১৬)। সংসার আর
সন্তানদের পড়ালেখা শেখানোর অবসরে একটু বেশী বয়সেই উনি কলম নিয়ে বসেন। কোলকাতার
দেবকুমার বসুর প্রেরণায় ১৯৯৯এ প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ “দূরের
নক্ষত্রের পথে”। তারপর তিনি অনবরত লেখালেখির মধ্যেই ছিলেন। তার কবিতার ছোট ছোট
সংলাপ, আত্মগত উচ্চারণ, তার লিরিকধর্মীতা যে কোন পাঠককেই সহজে আকর্ষণ করে। যেমন
কয়েকটা লাইন- ‘তুমি ঘুমোও /বা /না ঘুমোও / রাত্রি কেটে যাবেই’ বা ‘দুঃখের
আলোতে /আমার জন্মসিদ্ধ অধিকার।।’ তিনি কি
নিয়তই অনুভব করতেন তার মৃত্যুকে, তারই লেখা কয়েকটা লাইন- ‘আমি এসেছি আমাকে যেতে
হবে- /মাঝখানে শুধু /ধূলো খেলার কয়েকটা দিন’ !
প্রয়াত আরো এক কবির
কথা মনে আসে। নিখিল ঘোষ, লিখতেন কম; তিনি উল্লেখযোগ্য এই কারণে , বাংলা কবিতার
সংগে হিন্দী সাহিত্যের একটা যোগাযোগের জন্যে তিনি খুব চেষ্টা করতেন। আরো একজন
ছিলেন কবি গঙ্গাপ্রসাদ সিং(প্রয়াত), হিন্দীভাষী হয়েও তিনি বাংলাতে কবিতা লেখার
চেষ্টা করতেন। এটা তো সত্যি, বহির্বঙ্গে বসে সেখানকার সংস্কৃতি ও কবিতাকে চিনবো
না, এটা হয় না। বাংলা আর হিন্দী এই দুটো ভাষার মেলবন্ধন ঘটিয়ে এখানে আরও যারা কবিতা
লিখেছেন, তারা হলেন মিতা দাশ, গোবিন্দ পাল, দীপক সরকার, স্মৃতি দত্ত, ইলা
মুখোপাধ্যায়, মধু ভট্টাচার্য প্রমুখ।
শ্রমিক আন্দোলনের এক
অতি পরিচত নাম শঙ্কর গুহ নিয়োগী (জন্ম-১৯৪৩), ছত্তিশগড়ের রাজহরা অঞ্চল তার মূল
কর্মকেন্দ্র হলেও তিনি ভিলাইতেই একসময়ে চাকুরী করতেন, ভিলাইতেই তিনি খুন হন ১৯৯১ সালে। বেশ কিছু লেখা তিনি হিন্দীতে লিখলেও, বাংলাতে তার কয়েকটা
কবিতা পাই। তার কবিতার উঠে আসে শ্রমিক জীবন, শোষনের বিরুদ্ধে তীব্র উচ্চারণ- ‘যখন
যুদ্ধ না শান্তি, এই কথা ওঠে/ আমরা স্পষ্ট বলি আমরা শান্তির সপক্ষে... ( শান্তি
বিপ্লব ও বিকাশ)’ কিংবা ‘... অগন্য নরনারীর/ শ্লোগানে আকাশ মুখরিত হয়/
আর প্রত্যেকে বুকের গভীরে / আগলে বেড়ায় / এক একটি সূর্যকে (সূর্য)’। [কবিতা সূত্র – সংঘর্ষ ও নির্মাণ, (অনুষ্টুপ – এর
প্রকাশনা)]। যদিও
তার কবিতাতে কাব্যিক মেজাজের চাইতেও স্লোগানধর্মিতা বেশী, তবুও তার উল্লেখ প্রয়োজন
; তিনি সেই দলেরই মানুষ যিনি কবিতাকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক
আন্দোলনের উদ্দেশ্যে। প্রসঙ্গক্রমে একটা স্মৃতি চারণের মাধ্যমে উল্লেখ করছি পুরোনো
দিনে (সম্ভবতঃ ১৯৬৬ সাল) ভিলাই-এর বাংলা সাহিত্যপত্রিকা ‘অংকুর’ সম্পর্কে গুহ নিয়োগীর মনোভাব – ‘আমি অঙ্কুর-এর একটা কপি
শঙ্কর গুহ নিয়োগীকে দিই । ... ইত্যবসরে শঙ্কর গুহ নিয়োগী পত্রিকাটি পড়ে নিলেন। ...
তিনি বললেন এ প্লান্টের অঞ্চল থেকে এমন একটা পত্রিকা বের হয়, যার মধ্যে শ্রমিকদের
বিষয়ে শুধু লেখা নেই নয় কোথাও একটা শ্রমিক শব্দের উল্লেখও নেই; সুতরাং ওনার কাছে
পত্রিকাটি মূল্যহীন, কথাটি সত্যি বলে মেনে নিলাম।’ [ উদ্ধৃতিসূত্র – মুকুট বিহীন
লেখকের আত্মকথা - শিবব্রত দেওয়ানজী]। এ
প্রসঙ্গে আমারও মনে হয়, ভিলাই-এর সাহিত্য
ও কবিতায় মজদুর ও শ্রমিক জীবন খুব অল্পই এসেছে; বরং এই শিল্পনগরীর লেখা কবিতায়
শ্রমজীবনের কথা আরো আরো বেশী করে আসা উচিত ছিলো।
ভিলাইএর মাটিতে বাংলা
কবিতা চর্চার ইতিহাস প্রায় ষাট বছরের পুরানো হলেও বিভিন্ন সময়ে লিখে গেছেন অনেক
মানুষ । যেমন উৎপল সেনগুপ্ত, নিরঞ্জন চক্রবর্তী, এনারা দুজনেই প্রয়াত – কিন্তু
এদের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর উচ্চারণ সহজ সরল, অবশ্যই সমাজমুখী, কখনো এনারা
প্রতিবাদী। প্রয়াত শঙ্কর চক্রবর্তী ছিলেন এ অঞ্চলের পরিচিত ছড়াকার । ডাঃ সত্যরঞ্জন
দাশ পেশায় চিকিৎসক হয়ে সাহিত্য করেছেন, কখনো কখনো কবিতা লিখেছেন, ছাপা হয়েছে
ভিলাইএর মধ্যবলয় আর সেতু পত্রিকাতে। ভিলাইতে বাংলা কবিতা চর্চায় যে দম্পতির নাম
উল্লেখ করতে হয়, তারা হলেন সদানন্দ রায় ও বাসবী রায়; সদানন্দের একক কাব্যগ্রন্থ
ছাড়াও ওদের যৌথকাব্য গ্রন্থ “ভোরের হাওয়া” প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে।
লেখার সূচনাতেই বলা
হয়েছে মূলতঃ দুটো পত্রিকাকে ঘিরে এখানকার সাহিত্যচর্চা। তার একটা হচ্ছে অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত,
বিলাসপুর থেকে ভিলাইতে স্থানান্তরিত “সেতু” পত্রিকা – যার সম্পাদক মধু ভট্টাচার্য।
প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী ও জরুরী অবস্থায় মিসায় জেল খাটা এই লেখক ও কবির সামান্য
উল্লেখ এখানে করতে হয়। মধু ভট্টাচার্যর জন্ম ১৯৪৪ সালে বর্ধমানের ঘূণীতে,
পড়াশুনা-কলেজ নবদ্বীপে; কর্মসূত্রে তিনি এখন পাকাপাকি ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা। তার
একাধিক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে , যার কবিতার মূল বিষয় শোষিত জীবন ও সমাজ, এবং
রাজনীতি। বামপন্থী রাজনৈতিক তাগিদেই তার কলম তুলে নেয়া। তবুও তার কবিতা শুধুমাত্র
শ্লোগানধর্মি নয়। অনেক জায়গাতেই তার কবিতায় দেখি কাব্যিক মুন্সীয়ানার প্রকাশ –
তবুও তিনি দায়বদ্ধ। তাই তিনি তার “সূর্যের সামনে” কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় লেখেন
মাত্র তিনটি লাইন- ‘রাত্রির বৃন্ত ছিঁড়ে তুলে আনবো ফুল /সে ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে জেগে
উঠবে প্রাণ - / ভূবনের প্রাণে প্রাণে
ফেরাবো বিশ্বাস!’ কিংবা তিনি যখন লেখেন ‘কার্ল মার্কস অশোকবনে বসে বসে ভাবছেন।’ –
উত্থাপনার অভিনবত্বে আমরা চমকে উঠি। তার কাব্যগ্রন্থ “হে সময়! হে জীবন!” এর দুটো
কবিতা থেকে তুলে দেয়া যাক দুটো ভিন্ন ভিন্ন লাইন- ‘ কলম হে, জীবনভর তো বিদ্রোহ
দেখলে... / শিখলে না কিছুই ... !’ কিংবা ‘যে ভাসে, ভেসে বেড়ায় তার / উপড়ে যাওয়ার
ভয় কোথায়?’ কবিতার উচ্চারণ খুব সহজ, কিন্তু লেখা লাইনদুটো মনে রেখে যায়
দীর্ঘস্থায়ী এক প্রভাব।
এবার আসি নিজের কথায়,
এই লেখার প্রতিবেদক, আমি পশ্চিমবঙ্গ থেকে চাকুরীর সূত্রে ভিলাই আসি ১৯৮০তে, তারপর
থেকেই এই শিল্পনগরীর জীবন। বাংলার
জলহাওয়ায় বেড়ে ওঠা আমার কবিতা চর্চা এই বহির্বঙ্গের জীবনেও কিছু কিছু টিকে গেছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতায় আমি বিশ্বাসী, কবিতার কাব্যিকতা-চিত্রকল্প ও বাস্তবমুখীনতায়
আমিও আস্থাবান। প্রিয় পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কবিতার মাধ্যমে আমার অবশ্যই
অন্যসময়ে অন্যকোথাও সুযোগমতো মোলাকাত হবে।
[27/08/2018]
Published in কবিতা কোণ c/o - তপন ভট্টাচার্য / নবদ্বীপ
Comments
Post a Comment