গল্প # স্বয়ংসিদ্ধা
গল্প #
স্বয়ংসিদ্ধা
সমরেন্দ্র বিশ্বাস
বেলা আড়াইটের
লোকাল ট্রেন। দুপুরের অলসতা। অফিস টাইমের তাড়াহুড়ো নেই।
একজন এলোমেলো
চুল মহিলা, সুশ্রী, যদিও যৌবন যাই যাই । চেহারায় ভদ্রস্থ , পরনে
মানানসই শাড়ী ব্লাউজ। এইমাত্র
ট্রেনের কামরায় উঠে এলো মেয়েটি। কাঁধে তার সাইডব্যাগ, হাতের ছোট্ট থলেতে তরল
এরারুটের হাল্কাপানা বালতি, আঠা লাগানোর ব্রাশ আর কাপড়ের টুকরো ন্যাতাপাতি, রুমাল।
ট্রেনে দরজার
সামনেটা প্রায় ফাঁকা। উঠেই মেয়েটি ব্রাশ দিয়ে কাগজে আঠা লাগাতে লাগলো। এদিক ওদিক
না তাকিয়ে কম্পার্টমেন্টের দেয়ালে লাগিয়ে ফেললো গোটা চারেক রঙ্গীন কাগজ। পোস্টারে
লেখা –
পাত্র চাই
পাত্রী সুশ্রী, স্বাস্থ্যবতী,
প্রকৃত পুরুষেরাই ফোন করবেন
মোবাইল - ***** *****
ছেলেরাই সাধারণত পোষ্টার
ফোষ্টার লাগানোর কাজগুলো করে থাকে। সুশ্রী মেয়েটাকে চলন্ত ট্রেনে পোষ্টার লাগাতে দেখে কেউ কেউ আড় চোখে তাকায়! কেউ
কেউ ফিস ফিস করে। ‘প্রকৃত পুরুষের’ মানেটাই বা কি?
একজন প্রৌঢ় লোক কৌতূহলে
জিজ্ঞেস করে বসে – ‘ম্যাডাম, আপনি কি বিজ্ঞাপন এজেন্সীতে চাকুরী করেন?’
পোষ্টার লাগাতে লাগাতে মেয়েটি
সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় – ‘না।’ কন্ঠস্বরে কেমন নির্লিপ্ততা।
লোকটির কি আলুর দোষ আছে?
প্রৌঢ় লোকটি প্রশ্ন করে – ‘কিছু যদি মনে না করেন - জিজ্ঞেস করতে পারি কি –
পাত্রীটি কে , কোথায় থাকে, আপনার পোষ্টারে এসব কিছু তো লেখা নেই!’
গাড়ী থামতেই মেয়েটি শাড়ী
দুলিয়ে ট্রেন থেকে প্লাটফর্মে নামতে নামতে বললো – ‘আমিই পাত্রী। ডিটেলস জানতে হলে
পোষ্টারে দেয়া নাম্বারে ফোন করবেন।’
চোখ বাড়িয়ে দেখলাম, মেয়েটি
ব্যাগ – পোষ্টার নিয়ে উঠে পড়লো ডাউনগামী অন্য একটা লোকাল ট্রেনের কম্পার্মেন্টে।
কামরায় কামরায় পোষ্টার চিপকাবে। তার মা ও বাচ্চাদুটি
ঘরে তখন হয়তো এই এলোচুল স্বাস্থ্যবতীর অপেক্ষায় মধ্যাহ্নের প্রহর গুনছে ।
[Published]
Comments
Post a Comment