Posts

Showing posts from September, 2020

নেলসনের হাসি

  অনুগল্প #   নেলসনের হাসি # সমরেন্দ্র বিশ্বাস # চওড়া রাস্তাটা নদীর ধার ঘেঁসে চলে গেছে। রাস্তার একপাশে কালো কুচকুচে নাক-চ্যাপ্টা লোকটা ডুগডুগি বাজিয়ে লোকেদের নজর কাড়ছিল। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে হাঁকছিলো – ‘বাবুরা, মা-রা - এই নদীর কিনারে নেলসনের উঁচা মূর্তি বসবেক ! নেলসনের বহুৎ উঁচা মূর্তি!”     পাশেই বয়ে যাচ্ছে নর্মদার চওড়া জলস্রোত। ব্যস্ত রাস্তা, ট্রাক, বাস, ট্যাক্সি, লোকজন, দোকানপাট। কোথাও কোথাও রাস্তার কিনারটা ফাঁকা, গাছপালা, খোলা ফুটপাথ। দু চারটে গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী ঝুপড়ি। ওই ব্যস্ত রাস্তাটা দিয়েই পায়ে হেঁটে যাচ্ছি, হঠাৎ নজরে এলো ডুগডুগি বাজানো লোকটার চ্যাঁচানি। বর্ণ-বৈষম্য আর দারিদ্রের দেশ পেরিয়ে কানে এসে বিদ্ধ হলো সাদা-কালো কথাগুলো -“নেলসনের বহুৎ উঁচা মূর্তি!”         লোকটা ভিখারি গোছের । সামনেই অস্থায়ী ঝুপড়ি, ভবঘুরেদের আস্তানা যেমন হয় – তবে নিকানো গোছানো। ঝুপড়ির সামনে, রাস্তার কিনারেই কালো পলিথিনের আসন পাতা । তিন চারটে আলগা পাঁজা করে রাখা ইঁটে হেলান দিয়ে রাখা একটা ফটোফ্রেমে ভারতমাতার মূর্তি । ফটোটার সামনে বড়ো স্টীলের থালা । সেখা...

অনিবার্য সিঁড়ি আর উড়ন্ত রুমাল

  অনিবার্য সিঁড়ি আর উড়ন্ত রুমাল [ প্রয়াত শ্রী মতী গৌরী চক্রবর্তীর স্মৃতিতে ]   সমরেন্দ্র বিশ্বাস # # # আমাদের জন্মদিনগুলো   কতগুলো সিঁড়ি পেরিয়ে অবারিত রাস্তার   দিকে চলে গেছে ; শৈশবের সেই রাস্তাগুলো একদিন  ফিরে এসেছে ফ্লাট বাড়ির সিঁড়িতে , তারপর সেইসব অনিবার্য সিঁড়ি বেয়ে আমরা শুধু উপরে উঠেছি আর উঠেছি ! সেই সব সিঁড়িগুলো প্রত্যেক রাত্রে   কুর্নিস করে বয়সকে , সেই সব সিঁড়িগুলো অভিমান করে , চুপচাপ হাঁটা লাগায় মায়াবী আকাশের দিকে , সেই সব সিঁড়িগুলো মাঝে মাঝেই আমাদের ডাকে – আয় ! আয় ! সন্তান সন্ততির হাতে চুমু খেতে খেতে আমাদেরও বলে উঠতে হয় – একটু দাঁড়াও - আসছি ! আসছি ! ## সেদিন সকালে সূর্য পুরোটাই ভাষ্কর ছিল    হাসপাতালের রাস্তায় সন্ধ্যাকালীন মানুষজনের ভীড় ছিলো চোখে মৌরী -মিঠাই মাখা স্বপ্ন ছিলো মানা ছিলো না ইচ্ছে খুশী গান গাইবার ছিলো না সেই সব সিঁড়িগুলোর ডাকে জহ্লাদী চীৎকার । তবুও আমাদের প্রেমময়ী ছোটোমা সেদিন হঠাৎ হয়ে উঠলেন অসামান্য দুঃসাহসিনী ডাক-পাঠানো সেই সব সিঁড়িগুলোর দিকে   কেমন সহজেই হাত   বাড়িয়ে দিলে...

ট্রাফিক সিগন্যালে ফিরে যায় আফ্রোদিতি হাওয়া

  ট্রাফিক সিগন্যালে ফিরে যায় আফ্রোদিতি হাওয়া সমরেন্দ্র বিশ্বাস ১ বর্ম আর শিরস্ত্রাণে কেন ঢাকো আজন্ম শরীর? তুমি কাছে এলে মোহনায় জল ঝরে বসন্তের প্রেম-গন্ধ বয়ে নিয়ে আসে আফ্রোদিতি হাওয়া ! আজ ফিরে যাবে দেশে, দূরে? মেল ট্রেনে ? যদি ফিরে যাবে, কেন এলে ? ২ পাহাড়িয়া গন্ধ বয়ে আনে তোমার সংকেত পাথরের ভাষা বুঝে নেই নীরবেই তোমার শরীরে পড়ি প্রত্ন শিলালিপি নিমেষেই ঝর্ণা ঝরে তোমার দুচোখে একটা পাহাড় আজও আমাদের মাঝে, সুদূর তবুও, তোমার চোখের সংকেত গ্রীসদেশ থেকে আফিমের গন্ধ বয়ে আনে ! ৩ আমার দুয়ারে আসো ইহ-জন্ম নিয়ে, উস্‌কা চুলের মায়ায় বসন্তের হাওয়া ! ইশারায় ডাকো- চোখ তুলি , জন্মভর ভয় পায়ের নিষেধ রেখেছি পাপোষে ! জন্মান্তর মানি না, তবু মনে হয় পরজন্ম পেলে ভাল হতো ! আমাদের প্রেমকথা কিছুটা গোপন, তাই নতমুখে ফিরে যাও! মাঝে এক নিষেধের নদী, মহাকাল পুলের-উড়াল দেয়াল, খাম্বা আর সভ্যতার লোহা ! জানি এ জন্মে পাই নি তোমাকে ! বলো, সত্যি বলো , আমারই জন্যে তুমি পরজন্ম নেবে? ৪ তোমাকেই চাওয়া ! ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে আছি কতকাল। তোমার দীর্ঘশ্বাস বাতাসের ফাঁদে; মাঝপথে সাইরেন দিনরাত, বৈধতার চলাচল, দুরন্ত ট্রাফিক, দামামা বাজি...