মকবুল
মকবুল
সমরেন্দ্র বিশ্বাস
দেখতে দেখতে
বাহান্নটা বছর পেরিয়ে গেল।
যদি তুমি নদীকে জিজ্ঞাসা করো
‘এতদিনে
কতটা হেটেঁছো?’
নদী উত্তর দেবে ‘জানি না।’
যদি তুমি মকবুলকে জিজ্ঞাসা করো
‘এই
বাহান্ন বছরে তুমিই বা কতটা হাঁটলে?’
সেও বলবে ‘জানি না।’
#
ধুলো তেল কালি অন্ধকারে
মকবুল আজো
বিয়ারিং-এর ক্লিয়ারেন্স মাপে।
ওর সামনে মেশিনারী
আর পেছনে এক একটা করে
বাহান্নটা বছরের অপসৃত ছায়া।
#
কারখানার অন্ধকারে
মকবুলের আত্মার সঙ্গে লেপ্টে
থাকে
তার গায়ের ছোপ ছোপ কামিজ।
এই কামিজে ভাগ্য-বিধাতা যতই
কালি ছেটাও,
কারোর হিম্মত নেই একে ছোঁয়ার –
এই কামিজে মকবুল ঢেকে রেখেছে
তার যাবতীয় অপমান,
এই কামিজে মকবুল ধরে রেখেছে
তার আজীবনের অহঙ্কার।
#
সামনে দেখা হলে কাষ্ঠ হাসি হেসে
কেউ কেউ বলেন,
‘মকবুল, এ বয়সেও তোমার স্বাস্থ্য কেমন অটুট!’
আসলে অবাক হয় ওরা -
এত ধুলো কালি আর বিষাক্ত গ্যাস
খেয়েও
মকবুল এ বয়সে কেমন টানটান!
ওরা অপমানিত মানুষকেই দেখেছে
মানুষের অপমানকে জ্বলে উঠতে
দেখে নি,
ওরা মানুষের শিরদাঁড়া দেখেছে
অথচ মজ্জায় ঢোকানো অহঙ্কারের
উল্লাসকে
উন্মাদ হতে দেখে নি।
#
কালো ছোপ ছোপ কামিজ -
যা মকবুলের অপমান, যা মকবুলের অহঙ্কার
তারই দিকে পৃথিবীর ভবিতব্য হাত
বাড়িয়ে আছে।
#
দিগন্তের যে কোনও নির্মাণ,
শতাব্দীর যে কোনও সভ্যতা – তার দিকে চোখ ফেরাও।
সবাই অপেক্ষায় আছে
মানুষ কখন সূর্য হবে!
#
মানুষ মানেই শক্তি
সমস্ত শক্তির আজও একটাই নাম –
মকবুল! মকবুল!
[ কাব্যগ্রন্থ - হাওয়া
শিকার ]
Comments
Post a Comment