উন্মুক্ত এক পাঠশালা
উন্মুক্ত এক পাঠশালা
সমরেন্দ্র
বিশ্বাস
সাবালক বয়স তাকে
পৌঁছে দেয় পাঠশালা নামক একটা রেলস্টেশনে।
সেখানে তার জন্যে অপেক্ষা করছে প্রাচীন পুঁথি, আধুনিক ভূগোল। ট্রেন আসে। সফর চলতে
থাকে পরের স্টেশনের দিকে। একটার পর আরেকটা স্টেশন। স্কুলের পর স্কুল। স্কুলের ইউনিফর্ম বদলে বদলে
যায়। রাশি রাশি বই। একের পর এক রেল স্টেশনে, তর্কের পর তর্ক, একের পর এক মীমাংসা।
অবিরাম এই যাত্রাপথে সে দেখে, কিছু পুঁথি জেগে উঠে এসেছে রহমানের চাষের
ক্ষেতে, কিছু কিতাব লেখা হচ্ছে কারখানার জমায়েতে। লোকাল ট্রেনের ভীড়, ঝুপড়িবস্তির
অস্তিত্ব, দালালের খবরদারী, সহযাত্রীর
স্নেহপ্রবণতা- এসব কিছুই হয়ে যায় তার প্রকৃত শিক্ষক। ক্রূদ্ধ হয়ে টিকিট চেক
করতে আসে তার দৈনন্দিন জীবন। তবুও থোকা থোকা স্নেহ ঝুলে থাকে গাছে গাছে। পলাশের
ফুল থেকে সে আহরণ করে মেধা। দুপুরের
রেললাইন কখনো কখনো তাকে ফিরিয়ে দেয় ক্রোধ ও উত্তাপ। ট্রেন চলতে থাকে পরের স্টেশনের
দিকে। চলমান জীবনের ক্লান্তি।
শিয়ালদা স্টেশনের প্লাটফর্মের বাইরে ফুটপাথে সে ঘুমিয়ে পড়ে । স্বপ্নের
মধ্যে তার পিতা উঠে আসে, দুহাত তুলে আশীর্বাদ জানায় সন্তানকে। মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙ্গে যায়।
দেখে , সে শুয়ে আছে উন্মুক্ত এক পাঠশালার সামনেই, কোমল ঘাসের জমিতে, তাকে ঘিরে
রয়েছে জনসমুদ্র, মাথার উপরে আকাশে ঝুলে আছে একের পর এক তর্ক, একের পর এক মীমাংসা।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিতাব, বই পুস্তক - অগুন্তি, অসীম। অনেক শিক্ষক, অনেক
পরীক্ষক। রাস্তার গাছপালা, কুকুর বিড়াল,পোষ্টারে জেগে থাকা নায়িকার স্তন এ
সমস্তকিছুই পুস্তক হয়ে তার কাছে আসে! সে জানে, দুনিয়াদারির এই পাঠশালায় লেখাপড়া
শেখার জন্যে সে কোনদিনও কোন সার্টিফিকেট পাবে না ।
DibaRatrir
Kabya - Sahitya Sankhya -( June-) 2019
Comments
Post a Comment