অনেকদিন বাদে জীবনানন্দ

অনেকদিন বাদে জীবনানন্দ

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 

অনেকদিন বাদে জীবনানন্দ এসে নক্ করল আমার দরজায়,

বললো - চলো যাই, ঘুরে আসি বৃষ্টি ভেজা হরিদ্রার বনে।

ঠিক তক্ষুনিই এসটিডি-তে জরুরি ক্রিং ক্রিং,

বললাম - আজ নয়, ঘোরা হবে আরও অন্য কোনো দিন।

 

তারপর রাত্রি যখন দ্বিপ্রহর, লাশ কাটা স্বপ্ন ভেঙ্গে আমি

চোখ মেলি। হেমন্তের জড়তা খোলা জানলায়।

জীবনানন্দ ম্লান হেসে মুখ বাড়িয়ে বলল - যাবে নাকি?

চোখ রগড়ে দেখি কবিতার পাতাগুলো উড়ে যাচ্ছে

কংক্রিটের কোয়াটারের টেরেসে টেরেসে

হেসে ওঠে অন্ধকার, - কবিতা কেউ কি পড়ে?

ক্লান্ত চোখে জীবনানন্দ টুকুটুকু হেঁটে গেলো আরো অন্ধকারে;

বলে গেলো – তবে আসি আজ।

 

তারও পরে এক সন্ধ্যায় জীবনানন্দ এসেছিল বেড়াতে,

              টুং টাং হাত টানা রিক্সায়।

সেদিনও আমি ঘরে নেই, কপাট বন্ধ, হয়তো ডিউটিতে,

                     কিংবা ক্লাব-বারে।

ফিরে দেখি, শুধু পড়ে আছে তার হাতে লেখা চিরকুট –

যদি পারো এসে যেও শিওনাথ নদীটির কাছে, শ্মশানের ধারে,

                        সন্ধ্যা সাতটায়;

সঙ্গে নিয়ে এসো তাকে যাকে তুমি ‘বনলতা সেন’ বলো

 

অস্বস্তিকর রাত। তারপর আমি ডুবে যাই ঘোরে।

স্বপ্নে দেখি আমাদের বনলতা সেন রাত জাগা চোখে পড়ে যাচ্ছে

                    কম্পিটিশনের পাঠ,

কম্পিউটার ইন্টারনেটে তার মুখে আমি দেখি

কবিতার ডানা ছেঁড়া জায়মান বিষাদের ছায়া!

 

[কাব্যগ্রন্থ – পিতৃস্মৃতি, উদ্বাস্তু শিক্ষিকা ও অন্যান্য কবিতা (২০০৫)]

 

 

 

 


Comments

Popular posts from this blog

আমার অপমানিত সিঁড়ির বুক মাড়িয়ে

কামিনের জন্যে কবিতা

অন্ধকার, টানিয়ে রেখেছি অন্ধকার