Posts

Showing posts from June, 2021

অলৌকিক ঈশ্বরের বয়স

  অলৌকিক ঈশ্বরের বয়স সমরেন্দ্র বিশ্বাস #   আকাশের নীচে যে লোকটা ধান বুনেছিলো , সে এখন আস্তাকুড়ের তুষ । আকরিক গলিয়ে যে ইস্পাত বানিয়েছিলো , সে এখন পেরেক - ঠোকা কফিনে , মাটির অন্ধকারে । যারা খড় - মাটিতে প্রতিমা গড়তো , তারাও হারিয়ে গেছে ভাসানের জলে । নশ্বর মানুষদের বয়েস বাড়লে এমনটাই হয় । চিতার ফুলকিগুলো হারিয়ে যায় অন্ধকারে । আকাশের ভিজে লকারে । মানুষকে মানুষেরা তেমন মনে রাখে না । # সমস্ত দেব - দেবী আজও অবিনশ্বর ! কোন একদিন আকাশ থেকে নেমে এসেছিল যে ঈশ্বর , তার কোন মৃত্যু নেই ! বয়স তার পাললিক শিলার মতো ভারী , সময়ের সমস্ত দস্তাবেজ ছিঁড়েকুড়ে অলৌকিক ঈশ্বর এখনও পৃথিবীর প্রাচীনতম বেহালা বাজাচ্ছে ! আগ্নেয়গিরিতে জ্বলছে নীরোর আগুন ! # পয়গম্বরদের আয়ু কেন অনন্ত , ঈশ্বরের বয়েস কেন সূর্যের চেয়েও কোটি কোটি বছরের বেশী ? এমন একটা বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন করার জন্যে হাজতের ক্লাস - রুমে কোপার্নিকাস আজও নীলডাউন হয়ে বসে আছে !     ? শব্দসাঁকো দীপাবলি ক্রোড়পত্র   - 2020

ক্রীতদাস

  ক্রীতদাস সমরেন্দ্র বিশ্বাস   মুখে রক্ত মেখে অসহায় যে মানুষ বালুতে পড়ে থাকে   তার কোন ইতিহাস নেই। আজকে যাকে ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখেছি তাকেই দেখেছিলাম দুশো বছর আগের   শীর্ণ মন্বন্তরে কিংবা হাজার বছর আগে – এমনই রক্তাক্ত – রোমের এরিণায়! # রক্তাক্ত বিপন্নতার কোন   ইতিহাস থাকে না , ক্রীতদাসদের সাল তামামির কোন ক্যলেন্ডার নেই! # # #   [ মধ্যবলয় – এপ্রিল ২০১৮ ]

ভাইরাস

  ভাইরাস সমরেন্দ্র বিশ্বাস # গাছপালার খড়খড়ি হাওয়ায় দুলছে, বৃষ্টিঝরা রাতে কাঁপা কাঁপা আলোর ঝাঁঝরিতে কিছু কিছু স্মৃতি নিমেষেই হয়ে যাচ্ছে চোরা গোপ্তা ভাইরাস! আমাকে খেও না তুমি তার চেয়ে ভালো, ভাইরাস, তুমি স্মৃতিগুলো চেটে পুটে খাও! আমার ভেতরে বৃষ্টি, বাইরে বৃষ্টির ছাট জ্বরগ্রস্ত রাতে বসে আছি স্মৃতির চেয়ারে আলো অন্ধকার যবুথবু বারান্দায় । অদৃশ্য হাওয়ায় ভাইরাস কেন তুমি ভেসে ভেসে আসো? মিলির শরীর আর স্তন ছুঁয়ে বহু যুগের ওপার থেকে আজও ভেসে আসে অজানা ভাইরাস, সেন্টের অ্যানাস্থেসিয়া, সম্ভবতঃ লুই পাস্তুর কিংবা ইভান এরই নাম দিয়েছিলো সংক্রামক ‘মিলি’! সানুনয় অনুরোধ ভাইরাস, আমাকে খেও না তুমি বরং আমাদের স্মৃতিগুলো খাও!     [ প্রকাশিত – আত্মজা – অক্টোবর – ২০১৮ ]

পৃথিবীতেও ব্ল্যাকহোল আছড়ে পড়ে

  পৃথিবীতেও ব্ল্যাকহোল আছড়ে পড়ে # সমরেন্দ্র বিশ্বাস ## ডাইনে হাহাকার, বায়ে মেধাহীন ভয় সামনে দৃষ্টি মেলে বোবা দিগন্তে কুয়াশারা ছলাৎ ছলাৎ চরাচর জুড়ে ধেয়ে আসে অনন্ত জিজ্ঞাসা! দূরে নীহারিকা জ্যোতিষ্মান ডেকে নেয় চলমান লাভা, পৃথিবীকে গিলে খাবার আগে মহাবিশ্বে ঝড় ওঠে। অভিকর্ষীয় আবেগেরা নীলাভ শাড়ীর ভাজে কাঁদে   – ‘হে মোর মানবী, কেন তোমারে চিনিল না কেউ?’ # অরপা নদীর জল কেন বেঁকে গেলো জাহান্নামের দিকে? বরফ আর আগুনের নির্মাণ-কৌশল নিয়ে কেন ভুল পথে চলে গেল তোমাদেরই স্পর্ধিত সন্তান? # ধ্বংসকালীন প্রচন্ড গর্জনে সামনেই ছুটে আসছে ব্ল্যাকহোল - ঘুম ভাঙ্গা বিপন্নতা, ধ্বংসের ছাই উড়ছে বেতারে - পূর্বাভাসে! ক্ষীণস্বরে বাবা ডাকছে – ‘আয়, ফিরে আয়!’ আক্রান্ত পৃথিবীর বুকে দূর থেকে ছুটে আসছে গতি ও ভর - ‘তোরা নিপাত যা! হে ফান্টুস মহাজীবন, তোদের থোবরায় বিস্ফোরণ ...’ প্রচন্ড গর্জনে ব্ল্যাকহোল হেঁকে যাচ্ছে, – ‘জেনে রাখ বিপন্ন-পৃথিবীর কোন অস্ত্বিত্বই নেই আজ!’ # ঘরে ফিরে তবু আমি ইতিহাস-বই পড়ি, বাবার চায়ের কাপ ছলকে মেঝেতে পড়ে থাকে দুফোঁটা তরল উষ্ণতা ...   ...

আমার দু -হাত

   আমার দু -হাত সমরেন্দ্র বিশ্বাস  ## দীর্ঘতম পথ দিয়ে চলে যাওয়ার সময়ে মূহুর্তগুলোকে দুহাতে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলাম ; আজ এ দু হাতের মুঠোয় শুধুই অবারিত শূণ্যতা ! # এ জীবনে আমার অনেক রকমের কাজ ছিল , প্রত্যেকটা কাজই জন্ম দিয়েছিল নাবাল এ দুহাতে – কিছু গাছ কিছু তার আগাছা , হাতের মুঠো খুললে তাই দেখতে পেতাম গোছা গোছা শেকড় । হাতের তালুতে লেগে থাকতো রক্তের ছাপ , ঘামের তিক্ততা ; অজস্র ছবি পিছলে যেতো আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে । হাতের উপত্যকা বেয়ে নেমে আসতো দুঃখের ঝর্ণারা হাতের মুঠোয় ঝান্ডারা লিখে রাখতো প্রতিবাদ হাতের ছন্দময়তায় গান গাইতো রবিশঙ্করের মুর্চ্ছনা হাতের স্পর্শে লেগে থাকতো তোমার স্পর্শের সুখ হাতের মুদ্রায় অবনত থাকতো প্রভুর জন্যে কিছু প্রণিপাত। # ওই সমস্ত ঘামের তিক্ততা , রক্তের রেখা সুখ-দুঃখ সমস্ত উষ্ণতা ছন্দময়তা সমস্ত প্রণিপাত সমস্ত প্রতিবাদ এবং আমার সমস্ত কাজগুলো আমাকে নিয়ে যেতো আরো এক পূর্ণতার দিকে । # তবে এ ’ দু হাতের মুঠোয় কেন আজ শুধু অবারিত শূণ্যতা ? # আকাশের শূণ্যতায় ভাসতে ভাসতে দেখি , আমি নেই - আমার দুটো হাতই আগুন...

হীরাকুদ, উৎপল সেন ও আমাদের অগ্রজেরা

Image
  অনু গল্প   হীরাকুদ , উৎপল সেন ও আমাদের অগ্রজেরা সমরেন্দ্র বিশ্বাস জহর টাওয়ারের উপরে , উঁচু থেকে দেখছিলাম , থই থই করছে বিস্ময়কর জলাধার । ড্যামটার এ প্রান্ত থেকে চলে যাওয়া সুদীর্ঘ রাস্তাটা অদৃশ্য হয়ে গেছে । ওপ্রান্তে পৌঁছানোর আগেই ! হীরাকুদ ড্যামটা সত্যিই বিস্ময়কর ! স্বাধীনতার পরবর্তী ভারতবর্ষের একটা বিশাল নির্মান ! এই নির্মানে সামিল হয়েছিলো আমাদের অগ্রজ ও পূর্ব - পুরুষেরা । হঠাৎ যেন দেখলাম , বাঁধের উপর সরু রাস্তাটা দিয়ে হেঁটে আসছেন উৎপল সেন ও আরো কয়েকজন পূর্ব - পুরুষ ! পাশে হাঁটছিলেন বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ বিশ্বেসরাইয়া । হীরাকুদ বাঁধটির নির্মাতা এনারাই ! শুধু ড্যাম নয় , ওনারা এ দেশেটাকে একটু একটু করে নির্মান করছিলেন । পরে খেয়াল হলো , ওনারা তো কতদিন আগেই পরলোকগত হয়েছেন । আসলে আমি ভুল দেখেছিলাম । আরো কাছে আসতেই স্পষ্ট হলো ড্যামের উপর দিয়ে যারা হেঁটে আসছিল , তারা ওনারা নন । ওরা কতগুলো কর্মহীন পরিযায়ী শ্রমিক । হয়তো রুজির সন্ধানে বেরিয়েছে । রোজ ওদের খাবার জোটে না ! ওরা আমাদের এই দেশেরই মানুষ ! কিছুক্ষণ পরে জহর মিনারের উচ্চতা থেকে নেমে এলাম । বসে আছি ড্যামের ...