Posts

Showing posts from May, 2021

বর্বর পুরুষ

  বর্বর পুরুষ সমরেন্দ্র বিশ্বাস     নারীর পোষাক রুকস্যাকে চুরি করে আদিম নগ্নতাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফিরে গেছে মধ্যযুগীয় কোনো বর্বর পুরুষ! অহল্যা ইরাণী, পর পুরুষেরে বিনাদ্রোহে কেন দিলে যাবতীয় অন্তর্বাস , তোমার কুন্তল সজ্জা ? অহল্যা ইরাণী, এ তুমি কেমন রমণী? # পরবাসে সবার অজান্তে আয়নায় মুখ নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি আমিই কি সেই ছদ্মবেশী লোক ? অহল্যা ইরাণী, আমিই কি আত্মগোপনকারী মধ্যযুগীয় সেই বর্বর পুরুষ?   চাতক ? R-1 / শারদীয়া শব্দসাঁকো- 1427 ( 2020)

শিকড়-বাকড়ে টান লাগিছে

  শিকড় - বাকড়ে টান লাগিছে সমরেন্দ্র বিশ্বাস # উলু দে লো লেদুর মা বঙ্কার বউ শঙ্খ ফুঁয়া শিকড় - বাকড়ে টান্ ‌ লাগিছে । # শোনস্ ‌ না ওই ভূমির গভীর থিকা রে মিড় মিড় গান উইঠ্যা আয় । সীতা কি পাতাল যায় ? না না ভালো কইর ‌ ্যা দ্যাখ লো চাইয়া মাটির শরীর চিইর ‌ ্যা উইঠ্যা আসে #              পাতালের সীতা ! মাইন্ ‌ ষের হাতে অশ্বমেধের ঘোড়া ফান্দে পইড়্যা ছটফটায় # উলু দে লো লেদুর মা বঙ্কার বউ শঙ্খ ফুঁয়া শিকড় - বাকড়ে টান্ ‌ লাগিছে ।     [ তবু স্পন্দমান পথ ] © biswas.samarendra@hotmail.com

প্রতিদিন জন্মদিন

Image
  প্রতিদিন জন্মদিন          # সমরেন্দ্র বিশ্বাস          আমাদের সবটাই আলো , কিছু কিছু অন্ধকার আমাদের সবটাই দৃষ্টি , কিছু কিছু অন্ধত্ব রক্তে আমাদের স্বাধীনতা , তবু আজন্ম অধীন              - এভাবেই বেঁচে আছি । মৃত্যু ওৎ পেতে আছে ? নাকি প্রতিদিনই বাঁচতে বাঁচতে মরে যাচ্ছি আমরা ? সেসব মৃত্যুভয় দুপায়ে দুমড়ে ,    সবটুকু আলোর জন্যে        সর্বস্ব স্বাধীনতার জন্যে আমাদের রোজ রোজ ভিন্নতর জন্ম নিতে হয় । প্রতিদিন আমাদের জন্মদিন , তা না হলে প্রতিদিন শুধু মৃত্যুদিন ! তাই , মৃত্যুকে অপেক্ষায় বসিয়ে সোনালী মোমের ছুরিতে কেক কাটা কবে ভুলে গেছি ; ক্যালেন্ডারের কোনো বিশেষ তারিখে আমার নামের পাশে আজ আর কোনো সবিশেষ জন্মদিন নেই । =================== © biswas.samarendra@hotmail.com   Very Old Poem / প্লাবন – April 2021    

সম্ভ্রান্ত, তোমাকে স্যালুট

  সম্ভ্রান্ত , তোমাকে স্যালুট # সমরেন্দ্র বিশ্বাস # তোমার সামনে অসহায় মাথা ঝুঁকিয়ে আছে তোমাকে অসহায় প্রণিপাত করছে - বিষয়টা বহুৎ পুরোণো কিছুটা শ্বাসরোধী ধোঁয়া কিছুটা জট পাকানো অহঙ্কারের মতো # অসহায় লোকগুলো মাথা ঝুঁকিয়ে আছে ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলো একটু আধটু নড়া চড়া করছে । # তোমাকে লোকগুলো প্রণিপাত করছে ওদের সামনেই সেই স্যালুট স্যালুট রাস্তাটা ধরে জুতোর খুরে ধূলো উড়াতে উড়াতে তুমি নিশ্চিতই হেঁটে যাচ্ছো শিরোপাবিহীন পতনের দিকে!     শারদীয়া শব্দসাঁকো- 1427   (2020)        

সত্তর দশক

  সত্তর দশক সমরেন্দ্র বিশ্বাস # পিস্তলের খসে যাওয়া গুলির গোপন শব্দে কোলকাতার সকাল হয়ে যায় সরোজ দত্ত । থানার লকআপে বেবী রায়ের দুপুর জুড়ে থার্ড ডিগ্রী,   চাপা আর্তনাদ চপারের মতো । চীৎকার সময়ের হুইসেলে, আতঙ্ক মনের চিলেকোঠায়   – কারণ তখন সত্তর দশক! লাল বাবুলাল লেখা পাঁচিলের উপর মরা রোদ, গ্রামের হাওয়ায় টাঙ্গির ফিসফাস, সরকারী দপ্তরের পিচ্ছিল হুমকি আর নিরোধহীন বুলেট । শীষের সবুজ হাতছানি, বাবুই পাখিদের দিগন্ত জোড়া দরজি স্বপ্ন । কিছু যুবক হৃৎপিন্ড উপড়ে বানিয়েছিলো আঁকার সরঞ্জাম, নিজেদের রক্তে আঁকতে চেয়েছিলো ক্যানভাস। স্বদেশকে পালটে দেয়ার দামাল ছবি – কারণ তখন সত্তর দশক! # কেন ঘুমের মধ্যে পাগলা ঘন্টা , কেন সত্তর দশক জুড়ে তীরবিদ্ধ প্রশ্নের শায়িত শরশয্যা, কি তার উত্তর – পুরোটা আজও জানি না! কবিতাকে ফেস্টুন বা শ্লোগান করে বিপ্লব? যারা বলেছিল তারা কি চিরস্মরণীয় - জানি না! গ্রাম দিয়ে সত্যি সত্যি যাকে ঘিরে ফেলা যায়, সেই শহরের রঙটা কেমন – জানি না!   লোহার যে শেকল ছাড়া শ্রমিকদের হারাবার আর কিছুই নেই, কি তার ধাতব প্রণালী - জানি না! হৃৎপিন্ডকে ঝান্ডায় ঝুলিয়ে পথ হেঁটেছিলো যে দ...

হিটলারের ঘোড়া

  হিটলারের ঘোড়া সমরেন্দ্র বিশ্বাস   উছলে ওঠা ফেনা ফেনা রোদ্দুরে মাঝে মাঝেই ধূপধাপ শব্দ ! হিটলারের ঘোড়াটা কি এদিকেই ছুটে আসছে? আশেপাশে কেউ নেই , সামনে কাউকেই দেখছি না ! ঘরের খেলনাপত্র, জামাকাপড়, পুতুল-টুতুল এমন কি চাবি দেয়া ঘড়িটাকেও জাগিয়ে রাখি যাতে সবাই দিবা নিদ্রায় ঘুমিয়ে না পড়ে । মরচে ধরা কাটারিটাকে পাতকূয়া থেকে তুলে বালিতে ঘষি; শুনতে পাই পেনড্রাইভের মধ্যে ভরে রাখা মৃত মানুষদের যাদের হারমোনিয়াম থেকে ফিনকিতে রক্ত বেরিয়েছিলো । দরজার চৌখাটে স্মৃতির লাল লাল ছোপ ছোপ কামিজ , দেখি পৃথিবীর অনেক পড়শি আবাসনের দরজায় তাদের উদ্বেগ বেচছে! এমনই দুঃসময়ে শতাব্দীর বৃদ্ধ জিরাফগুলো হাসতে হাসতে রাস্তা দিয়ে হারিয়ে যায়, জেব্রার হাসির মধ্যে কারা চীৎকার করে ওঠে – জাগতে রহো! হিটলারের ঘোড়াটা কি এদিকেই ছুটে আসছে? সামনে তো কাউকেই দেখছি না ! ফেনা ফেনা রোদ্দুরের ভেতরে গ্যাস চেম্বারের ধোঁয়া, সমস্ত দুপুর জুড়ে নাৎসী ষড়যন্ত্রের ধূপ ধাপ শব্দ!   [ 23/12/2020 / R1 ] আরাত্রিক / ARATRIK – Book Fair Issue 2021

কলম্বাসের জাহাজ

  কলম্বাসের জাহাজ সমরেন্দ্র বিশ্বাস #   ‘ জাহাজ ভাসিয়ে নিয়ে চলো – সামনেই স্থলভূমি , মানুষের আকাঙ্খিত মাটি । ’ # পৃথিবীর চোখে ভাসে দিকহীন সমুদ্রের নীল অবিরাম ফেটে যায় সময়ের ফেনা অনাহার শিঙা ফোঁকে জাহাজের ডেকে প্রিয়তম সহযাত্রী হতাশায় বিরোধ সানায় # ‘ তবু নয় থেমে থাকা , নয় পিছু ফেরা – জাহাজ ভাসিয়ে নিয়ে চলো – সামনেই স্থলভূমি , মানুষের প্রিয়তম মাটি । ’ # ইতিহাস জানে কি , কে এই কলম্বাস ? হে মানুষ , দৃঢ় ভাবে স্থির ধরে থাকো , দিশাহীন অন্ধকারে কলম্বাস হয়ে যাক্ ‌ তোমার বিশ্বাস ! [ ফেব্রুয়ারী -2, 1989]   সময়ের পদাবলী / স্রোতে স্রোতে ভাসমান ভেলা

মকবুল

  মকবুল সমরেন্দ্র বিশ্বাস দেখতে দেখতে বাহান্নটা বছর পেরিয়ে গেল। যদি তুমি নদীকে জিজ্ঞাসা করো   ‘ এতদিনে কতটা হেটেঁছো ?’ নদী উত্তর দেবে ‘ জানি না। ’ যদি তুমি মকবুলকে জিজ্ঞাসা করো ‘ এই বাহান্ন বছরে তুমিই বা কতটা হাঁটলে ?’ সেও বলবে ‘ জানি না। ’ # ধুলো তেল কালি অন্ধকারে   মকবুল আজো বিয়ারিং-এর ক্লিয়ারেন্স মাপে। ওর সামনে মেশিনারী আর পেছনে এক একটা করে বাহান্নটা বছরের অপসৃত ছায়া। # কারখানার অন্ধকারে মকবুলের আত্মার সঙ্গে লেপ্টে থাকে তার গায়ের ছোপ ছোপ কামিজ। এই কামিজে ভাগ্য-বিধাতা যতই কালি ছেটাও , কারোর হিম্মত নেই একে ছোঁয়ার – এই কামিজে মকবুল ঢেকে রেখেছে তার যাবতীয় অপমান , এই কামিজে মকবুল ধরে রেখেছে তার আজীবনের অহঙ্কার। # সামনে দেখা হলে কাষ্ঠ হাসি হেসে   কেউ কেউ বলেন , ‘ মকবুল , এ বয়সেও তোমার স্বাস্থ্য কেমন অটুট! ’ আসলে অবাক হয় ওরা - এত ধুলো কালি আর বিষাক্ত গ্যাস খেয়েও মকবুল এ বয়সে কেমন টানটান!   ওরা অপমানিত মানুষকেই দেখেছে মানুষের অপমানকে জ্বলে উঠতে দেখে নি , ওরা মানুষের শিরদাঁড়া দেখেছে অথচ মজ্জায় ঢোকানো অহঙ্কারের উল্লাসকে   ...

ভালোবাসার সন্ধানে কয়েকটি চরিত্র

Image
  ভালোবাসার সন্ধানে কয়েকটি চরিত্র সমরেন্দ্র বিশ্বাস দরজায় কলিং বেল টিপলাম , ভেতর থেকে কোকিলের ডাক ভেসে এলো । দরজা খুলে গেলো । দেখলাম , প্রিয়াঙ্কা নিজেই বেরিয়ে এসেছে । এক ঝলক হেসে প্রিয়াঙ্কা জিজ্ঞাসা করলো ‘ আরে , তুমি !’ আমি একটু হাসলাম । কোন কথা বললাম না । সোজা ওদের সবুজ সোফাটায় গিয়ে বসে পড়লাম । প্রিয়াঙ্কা সোফাতেই আমার পাশে ধপ করে বসে পড়লো । সোফার স্প্রিংগুলো নড়ে চড়ে উঠলো । সামনের দরজাটায় ঝুলছিল একটা সবুজ ভারী পর্দা । আমরা মান্না দে’র গান নিয়ে , অনুপ জলোটার গজল নিয়ে , জার্ণালিজমের কোর্স নিয়ে এবং মেসোমশাইর মারুতি গাড়ী কেনা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করলাম । এক সময় কোন প্রসঙ্গই আর তেমন ভাবে এগোলো না । শুধু নীরবতা সময়কে কাটতে লাগলো । তারপর প্রিয়াঙ্কা আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো । ওর সপ্রতিভ ভাবটা এতক্ষণে যেন ফিরে পেয়েছে । আমায় সপ্রতিভ ভাবেই বললো , ‘ আচ্ছা একটা কথা বলবো ? তুমি ইউ পি এস সি - র পরীক্ষাটায় বসছো না কেন ?’ প্রিয়াঙ্কার উপর আমার রাগ হলো । আমি জিজ্ঞাসা করলাম , ‘ এসব পরীক্ষা টরীক্ষা দিয়ে কি হবে ?’ প্রিয়াঙ্কা হালকা করে হেসে জবাব দিলো , ‘ জানো তো , একটা ভ...