Posts

Showing posts from July, 2020

গ্যালিলিওর ছায়া

Image
সমরেন্দ্র বিশ্বাস # এই পৃথিবীতে আমাদের সঙ্গে সব সময়েই ঘুরতে থাকে একটা সত্যান্বেষী ছায়া, এ সেই ছায়া যে মৃত্যুদন্ডকে উপেক্ষা করে বলেছিলো – পৃথিবী ঘুরছে, তা সূর্যের চারপাশেই! এ সেই ছায়া যে সব সময়ই লগ্ন থাকে গ্যলিলিওর চারপাশে, এ সেই ছায়া যে আজও রাস্তায় রাস্তায় একা ঘুরে বেড়ায় ! Painting by - Ananya Biswas

ফসল

সমরেন্দ্র বিশ্বাস # চাঁদের হলুদ মাখে সতর্কিত মাঠ; জীবনের ভালোবাসা – তারও নাম ধান। ফসলের শীষ থেকে বহুযুগ আগেকার কাটা-হাত ঝোলে; হাতছানি দেয় সন্তানেরে। ফসল আগলানো রাত শেষে মানুষের অধিকার আজও রক্ত মাখে আলের উপর। # # # [ কাব্যগ্রন্থ - হাওয়া শিকার ]

=== পাহাড়িয়া ===

সারাদিন ক্লান্তিকর হেঁটে গেছি পথ পাহাড়ি পথের ধারে বসে বসে ভেঙেছি পাথর কুয়াশা মেঘের কোলে ঢলে গেল দিন চলো তুলি ঝোলাঝুলি, বুঝে নেই কুড়া। # দুজনের কতদিন এই ভাবে কেটে গেল পথে দুজনেতে মিলেমিশে দিনভর ভেঙেছি পাথর রৌদ্র বৃষ্টি চেটে পুটে খেয়ে নিল মানুষের দেহ ঠিকাদার ফিরে গেল বুঝে নিয়ে হিসেবের ভাগ। # পাহাড়ের নীচে ঘর কাঠ দিয়ে ঢাকা চলো আজ ঘরে ফিরি, কুটো জ্বেলে সেঁকে নেব রুটি তুমি বুনো লোম দিয়ে তে-চোখা পাপোশ আমি চুপ শুয়ে রব তোমার বালিশে। # ভারি ভারি পাথরেরা ভেঙে যায় রাতে ছেঁড়াখোঁড়া পোষাকেরা জুড়ে জুড়ে যায় মিহি মিহি স্বপ্নগুলো ঢেকে দেয় পাথরের বুক উত্তাপেরা দীর্ঘ হলে মুখে পাই শ্যাওলার স্বাদ! # # # সমরেন্দ্র বিশ্বাস [ কাব্যগ্রন্থ - হাওয়া শিকার ] Like Comment Share

জীবন

জন্মই আমাদের আজন্মের অধিকার - সান্ত্রীর পাহারায় রাখা এই প্রিয় কথাগুলোকে লোহার গারদ থেকে উঠিয়ে এখন শুকিয়ে নিচ্ছি আগুনে , চুপিচুপি চাঁদের আলোয়! # সমরেন্দ্র বিশ্বাস © biswas.samarendra@hotmail.com

একটি কবিতা

সমরেন্দ্র বিশ্বাস # আকাশ যখন স্বপ্নের ভারে ধূসর হয়ে ওঠে সঞ্চারিত মনের অসংখ্য জলকণা মাটি আর মানুষের জন্যে নতজানু হয় ; তখনই তুমি লিখে ফেলো রামধনুর মতো একটি অবাক কবিতা! [ অনন্ত জলশব্দে আমি ]

তোমার জন্যে

সমরেন্দ্র বিশ্বাস # রাত্রে যখন ডাকছে কেউ , দিচ্ছে হাওয়ায় শীষ- কী করেছি , কী করেছি , নিজের হাতেই ধরেছি যে তীব্রতম বিষ! বিষ ধরেছি – বিষ ধরেছি , লোকের তাতে কি ? বিষের জাড়ে রাত্রি পাগল স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্ন দেখা মৃত্যু সামিল , তোদের তাতে কি – তোমার জন্যে , তোমার জন্যেই – তীব্র ঠোঁটে পাগল আমি বিষকে ছুঁয়েছি ! গ্রন্থ- হাওয়া শিকার (1995) © biswas.samarendra@hotmail.com

আয়ু

সমরেন্দ্র বিশ্বাস # দেব দেউলের গায়ে , পাথরের খাঁজে আমাদের আয়ু আঁকা – যেন পাখি । অবিনাশী ঝড় খর দৃষ্টিপাত ছুয়ে যায় তার ক্লান্ত দুটো ডানা । পর্যটণ শেষে ফিরে যাই , তবু পাথরের গয়ে লগ্ন থাকে পাখি বছর বছর ; নামহীন নিত্য পাখি , মনু যার নাম । [ কাব্যগ্রন্থ - অনন্ত জলশব্দে আমি ]

গাড়ী

Image
সমরেন্দ্র বিশ্বাস # সার্চ লাইটের আলোয় পিছলে যাচ্ছে ধান খেত , সার্চ লাইটের আলোয় থেতলে যাচ্ছে কুহক স্তব্ধতা , সার্চ লাইটের আলোয় ভেসে বেড়াচ্ছে প্রতিশ্রুতি ! দ্রুতগামী গাড়ীর আলোয় সভ্যতার চোখে ধাঁধা , কিছু পাবার আশায় নাচছে গ্রাম ও শহরের হৃৎপিণ্ড । ড্রাইভারের নিয়ন্ত্রনে এ সময়ের যাবতীয় সার্চ লাইট ; অথচ ড্রাইভার-সীটে কোন মানুষ নেই। একটা মুদ্রা-মানুষের ছায়া আরো কিছু মুদ্রার নির্দেশে                                                          সভ্যতার গাড়ীটা চালাচ্ছে ! [ কাব্যগ্রন্থ - অনন্ত জলশব্দে আমি (2016)] © biswas.samarendra@hotmail.com

ধূপ পোড়ে

সমরেন্দ্র বিশ্বাস # এবং উচ্ছ্বাসময় রাবীন্দ্রিক গান সরস্বতী পূজা মনুমেন্ট ময়দান ভীড় উচ্ছ্বলতা    লো ভোল্টেজ ল্যাম্প         পান্ডুরতা ও সুশ্বেতার মুখ     মুছে যাচ্ছে -     মুছে যাচ্ছে দেয়ালে চক পেন্সিলের দাগ # দিনেরা কর্কশ , ডাকে কাক ভেতরে মুমূর্ষু বিষন্নতা খোলাচুল ওড়ে না হাওয়ায় –        ধূপ পোড়ে শুধু – আরো এক বৈচিত্রহীন রাতের জন্যে        বয়স্ক ধূপদানি রাত জেগে যায় । 28.07.1977 ======= © biswas.samarendra@hotmail.com

আঁতুড়ঘর

সমরেন্দ্র বিশ্বাস # আঁতুড়ঘরের সামনে দাঁড়ালে গা শিরশির করে , আঁতুড়ঘরের দেয়ালে ঝুঁকে আছে প্রতিবন্ধী হাওয়া , আঁতুড়ঘরের মেঝেতে শুয়ে আছে একলক্ষ মা , আঁতুড়ঘরে একলক্ষ সন্তানেরা জন্মানোর অপেক্ষায় ! # আঁতুড়ঘরে কোন নার্সিংহোম নেই , হস্ ‌ পিটাল নেই , অ্যাপ্রোন - পরা ময়ুরাক্ষী নার্সেরা নেই , প্রাচীন পৃথিবীর ধাই - মা ’ র মতো এখানে আছে মমতাময়ী আলো ভোরকে ছিনিয়ে নেয়ার মতো আছে আলো - আঁধারির খেলা , আছে টুকরো টুকরো ব্লেড , গরমজল , জীবানুনাশক তরল আর কিছু পরিষ্কার ন্যাকড়া । # আমাদের মা রক্তস্রোতে ভেসে যাচ্ছে । আঁতুড়ঘর থেকে জন্ম নিচ্ছে ভারতবর্ষ ; আসাম থেকে মহারাষ্ট্র , কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা আঁতুড়ঘরের গুমটিগুলোর চারপাশে গোয়েন্দাদের চোখ , আঁতুড়ঘরের মধ্য থেকে ভেসে আসছে প্রসব - যন্ত্রণার আর্তস্বর , এখানে আলো হাওয়া জল - মৃত্তিকায় অধিকার উচ্চারিত হচ্ছে , শোনা যাচ্ছে নবজাতকের অস্ফুট কন্ঠস্বর ! # আঁতুড়ঘরের ভেতর একলক্ষ ধাত্রীর মমতাময়ী চোখ আঁতুড়ঘরের বাইরে লক্ষ লক্ষ সেবক সারিবদ্ধ জঙ্গল রাজত্বে বাঘের থাবার থেকে আঁতুড়ঘরকে বাঁচানোর মরণপণ করেছে তারা , এই সে...