Posts

Showing posts from August, 2020

অগ্নিকুন্ড

  অগ্নিকুন্ড একদিন সমস্ত জানালা খুলে যাবে টেলিফোনে ভেসে আসবে না একটাও কথা জলের ট্যাঙ্ক থেকে উপ্চে পড়বে না একটুও জল স্টোভের আগুন জ্বলতে জ্বলতে নিভে যাবে থেমে যাবে সমস্ত ঘড়ির কাঁটা, বাড়িয়ালার পাওনা গন্ডা চারপাশের কোয়াটার্সগুলোয় উঁকি মারবে না একটাও মুখ থমকে যাবে যাযাবর বাতাসের খেলাধূলা তুমি তখনও আনমনে খুলে বসে থাকবে তোমার জানলা তোমার চোখে একটুকু জল নেই মে-র গরম হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে আসবে কিছু টুকরো স্মৃতি এমনিই যদি হবে, কেন তোমায় আমি নাম ধরে ডাকলাম বুকের অরণ্যে অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে, দু’হাত দু’পা রক্তাক্ত করে কেনই বা তুমি এতটা পথ ছুটলে? যে কথা কেউ আমাদের শিখিয়ে দেয় নি যে কথা আমি জীবন দিয়ে জেনেছিলাম যে কথা তুমি এলোপাথারি পথ ঘুরতে ঘুরতে জেনেছিলে সেসব প্রশ্ন তুমি যে কাউকে জিজ্ঞাসা কোরো সেসব কথা আমাদের মতো কেউই জানবে না জিজ্ঞাসা কোরো গভীর রাতকে, আকাশের তারাদের- চারপাশে শুধু জেগে থাকবে এক গভীর উচ্চারণহীনতা! # # # সমরেন্দ্র বিশ্বাস [ কাব্যগ্রন্থ – পিতৃস্মৃতি, উদ্বাস্তু শিক্ষিকা ও অন্যান্য কবিতা ] ======= © biswas.samarendra@hotmail.com

রমণী, তবু তো শুধুমাত্র রমণী যে নয়

Image
  রমণী, তবু তো শুধুমাত্র রমণী যে নয় [শ্রদ্ধেয় আবুল হাসানের ‘নিঃসঙ্গতা’ কবিতাটির প্রতিপক্ষে দাঁড়িয়ে ] # খেলাঘরে ম্লান আলো ক্ষয়ে গেলে পরে ঘরে ফিরে একদিন যে মেয়েটি আয়নার মুখোমুখি চেয়েছিল একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী, সে মেয়েকে ডেকে ডেকে নিয়ে গেছে সময়ের উট। # রাজপথে ঘুরে ঘুরে সে মেয়েটি দেখেছে অনেক, জেনেছে সে অবশেষে এ সমাজে অনেকেই আধো অন্ধকারে প্রকৃত প্রস্তাবে তাকে জেনেছে রমণী- গোপন ঘরেতে রাখা বিছানা পত্তর। # রাগে অপমানে সে মেয়েটি তাই পায়ের খুরেতে ভাঙে জলবন্দী কুঁজো আর ঘুমের বাদাম, সমাজ স্বাধীনতা ইত্যাকার শব্দগুলি কাঁসার থালার মতো তার রাগী হাতে ভাঙে খান্ খান্ । # কারণ, সে চেয়েছিল : বস্তুত রমণী, তবু সে তো শুধু মাত্র রমণী যে নয়, তার চেয়ে বেশী কিছু তাকে আজ জানুক মানুষ। # # # সমরেন্দ্র বিশ্বাস [ কাব্যগ্রন্থ - তবু স্পন্দমান পথ / 1986 ] © biswas.samarendra@gmail.com

শব্দমালা স্বপ্নমালা

  শব্দমালা স্বপ্নমালা (বিপ্লবী কবি চেরাবান্দারাজুকে ) # মাঝরাতে বেল্টবুটে কেঁদে ওঠে পাড়া, তবু ঠকাঠক্ মাকু নির্ভীক শব্দ তোলে, তাঁতে শব্দ বুনে যায় কারিগর কেউ। সে কি বোনে শব্দ শুধু, নাকি স্বপ্নের পশম? # গান্ধীনগরের রাত্রি জুড়ে যতো গোকুলের বুকে গর্জায় গোলা, রক্ত মেখে শুয়ে থাকে ঝলসানো কাশ। মেঘের মালিক কেউ ঢাল তলোয়ারে বর্ষা আনে শব্দে শব্দে! সে কি শুধু শব্দ, না কি মাঝ ঘুমে স্বপ্নের উষ্ণ বারিপাত? # বছর পেরিয়ে ফের কাশ ফুল ফোটে, ঝুঁটি তোলে সাদা অধিকার, সারা রাত শব্দ ঝরে পাথুরে হৃদয়ে, মোহনা ছাড়িয়ে সব শব্দ স্বপ্ন হয়ে মিশে যায় সমুদ্র জনতায়। # সমুদ্র-শিক্ষক হয়ে রাত্রির আকাশে বাতি জ্বেলে জেগে থাকে সুব্বারাও সরোজের সাথে আরো এক নক্ষত্রের ধাবমান চোখ। # সাইরেণ ভর করে শকুনের ডানা। অবিরাম অগ্নিকুন্ড জ্বলমান তবু স্বপ্নের আবেশে- জ্বলমান যত শব্দমালা! # # # সমরেন্দ্র বিশ্বাস [ কাব্যগ্রন্থ - তবু স্পন্দমান পথ / 1986 ]

রক্ত বেচার পরে

  রক্ত বেচার পরে # দীর্ঘদেহী মানুষটা আকাশের দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে প্রচন্ড হুঙ্কার দিলো। তার চোখের সামনে থর থর করে কাঁপছে অট্টালিকার ভাঙা কার্নিশ! এক বোতল রক্ত বেচে মাতালের মতো টলতে টলতে সে এখন ঘরে ফিরছে! # # # সমরেন্দ্র বিশ্বাস [ কাব্যগ্রন্থ - হাওয়া শিকার ]

নির্বাসিত হও

Image
  নির্বাসিত হও সমরেন্দ্র বিশ্বাস # তোমায় নির্বাসন দিলাম । সমুদ্র সীমান্তের সমান্তরাল পথ ধরে তুমি নির্বাসিত হও । সংযুক্তা , আলো ঝলমল তোমার পৃথিবী থেকে তুমি নির্বাসিত হও । # দিগন্তে দিগন্তে হানাদারী জাগুয়ার চীৎকার পাড়ে , দেহে ক্ষত – বুক নীল যন্ত্রণায় , তবু বন্দীশালার মানুষ গরাদের ফাঁকে ফাঁকে দুচোখের তুলি দিয়ে এঁকে নেয় মুক্তির আকাশ । গরাদের ঘরে আমি বেঁচে আছি রাত্রি দিন , কেউ তো তেমন করে বাঁধে নি আমার হাত দু ’ পা এগোলে এমন কেউ নেই মুখোমুখি বলে দেবে ‘ না ’ – তবু স্থির বিশ্বাসে জেনে গেছি আমি আমার দুহাতে ঝোলে বন্দীর শেকল , আমার দু ’ পায়ে বেড়ি , সম্মুখে প্রহরী ; পেছনে পেছনে ঘোরে ক্রূর ঘাতকের দল নির্মম আক্রোশে আমার গানের কলি তলোয়ারে ফালাফালা প্রকাশ্য ময়দানে । ইতিহাস ঘেঁটে ঘেঁটে বুঝে গেছি আজ অভিজ্ঞতা দিয়ে দিয়ে বুঝে গেছি আজ শেকল ছেঁড়ার গান , লঙ্ ‌ মার্চের পথে পাহাড় ভাঙার গান বন্দী সব মানুষের অতি বড় প্রিয় ! # সংযুক্তা , তুমি কি বন্দী নও ? কিংবা তুমি দেখে দেখে সুনিপুন ভুলে গেছ সব ? আর তাই দূরে সরে গিয়ে তুমি এখন আকাশে ওড়াও ফুল...

রাত্রির মান্দাসে

  রাত্রির মান্দাসে সমরেন্দ্র বিশ্বাস # রাত্রির আকাশে তারাগুলো হয়ে ওঠে আমার প্রকৃত অভিভাবক ; সে ডাকে আয় , কাছে আয় ! আমি ভুলে যাই এযাবৎ শেখানো যত নীতিকথা - মহাশূন্যে উড়ে যায় আমার সমস্ত অভিধান । গাছের একটা ফুল ছাড়া আর কেউ আমাকে মনে রাখে না । তারপর ফুলটাও পূর্বজের অমোঘ নিয়মে ঘুমোতে চলে যায় । অনন্ত রাত্রির মান্দাসে আমি ভেসে যাই । এই রাত্রে দু চোখের জল স্পর্শ করে বুঝতে পারি জীবনটা কত উষ্ণ ছিলো ! # [ কাব্যগ্রন্থ – অনন্ত জলশব্দে আমি ] Picture Courtesy – Internet.  

মন্দির দর্শন

  অনুগল্প মন্দির   দর্শন সমরেন্দ্র   বিশ্বাস           ‘ কাম , ক্রোধ , লোভ নিয়ে মন্দির দর্শণে আসবেন না। ’ দেবস্থানের   প্রধান   ফাটকের   সাইনবোর্ডটা   চোখে   পড়েছিলো । এসেছিলাম পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা মন্দির - শহরটার পাশ দিয়ে , দেবস্থানটা দেখবো বলে। রাস্তায় গাছের সবুজ ছায়া। তারই মাঝে মন্দির। কাছেই কয়েকটা বড় বড় বিল্ডিং , ফ্লাটের দরজা জানালা। একটা ফ্লাটের ব্যালকনিতে ঝুলছিল ব্রা , প্যান্টি , সায়া। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম সেই মেয়েটির মুখ , উদ্বেলিত স্তন , ফরসা শরীর। আমরা কি রিপু শূণ্য হতে পারি ? আমি কি মেয়েটিকে চিনি ? আমার রক্তে বেজে উঠলো তার সুর। প্রধান ফটকের নিষেধাজ্ঞার কথা মনে পড়লো। ‘ কাম , ক্রোধ , লোভ নিয়ে মন্দির দর্শণে আসবেন না। ’ কামোত্তেজিত আমি পেছনে ফিরে এলাম। আমার আর মন্দির দর্শণ হলো না। জানি এ জন্মে আমার আর কোনদিনও মন্দির দর্শণ হবে না।   © biswas.samarendra@hotmail.com   প্রকাশিত – অনু রণন ( নববর্ষ -১৪২৬) Retyped – 28.08.2020        

রুমার সৌরমন্ডল থেকে

  রুমার সৌরমন্ডল থেকে সমরেন্দ্র বিশ্বাস রুমার সৌরমন্ডল থেকে গড়িয়ে নামে আলোর মোহাচ্ছন্ন নদী উজ্জ্বল দুচোখে গ্রহান্তরের মায়াবী জ্যোৎস্না । # সময় একেলা হোলে রক্তেথার্মোমিটার, পারদ উজ্জ্বলতা রুমা সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর নগ্ন শরীরের ভাঁজে ভাঁজে নীল ঘূর্নি, সমুদ্র সংকেত, সুনামি কখনো বা বনাঞ্চল, পাহাড় টিলা, নদী, ঝোপঝাড়, ব-দ্বীপ। ওর দুটো গালে লেগে থাকে গ্রহান্তরের পিছলে যাওয়া গোলাপী রশ্মি। # রুমার মায়াবী ভূগোলে সরোবর, আমাজান অরণ্যের বৃষ্টিপাত পাখীওড়া আঁশটে বালিয়ারী, তাপমাত্রার একশো ডিগ্রী ওঠা -নামা ওর ঠোঁটের এককোণে চিকচিক করে ওঠে কুহেলি হ্রদ। # সেদিন রুমা ফিরে যায়, অনিচ্ছুক ফিরে যাবার আগে ওর সৌরমন্ডলের বিচ্ছুরণ থেকে তুলে নেই এক চিলতে জার্ম জাগ্রত জীবানুগুলো আটকে রাখি রক্তে , গোলাপি জিভের নীচে। # বনজোছনায় মাখামাখি আরেকদিন মাঝরাতের ঘুম ভেঙ্গে দেখি পুরুলিয়ার পলাশ প্রান্তর পেরিয়ে  ডুরে-পাড় শাড়ি, বিনা ব্লাউজেইসে জেগে উঠেছে সৌরমন্ডলের অন্ধকারে । # বাকী রাত নক্ষত্রের সামনে ঝরতে থাকে রুমার শরীরের অলৌকিক বিচ্ছুরণ!   Published - বম্বে DUC...

আগুন

  আগুন # সমরেন্দ্র বিশ্বাস #   আগুন যতো পারো আমাকে পোড়াও – অঙ্গার নয় , পুড়ে গেলে দেহখানা সোনা বর্ণ হবে , # যতো পারো দুঃখ দাও ।   [ কাব্যগ্রন্থ - হাওয়া শিকার ( প্রকাশ -1995)]

আমিনুলের দিন

  অনুগল্প # আমিনুলের দিন # সমরেন্দ্র বিশ্বাস গেরুয়া রঙের বিশাল মঞ্চ । লোকজনদের জন্যে বিশাল বিশাল সামিয়ানা , তাতেও গেরুয়া রঙের আচ্ছাদন । প্রত্যেকটা সামিয়ানার ভেতর বড় বড় এলইডি-টিভির ব্যবস্থা । দু’ঘন্টার ব্যাপক রাজকীয় সমাবেশ। রাস্তার দুধারে গাছের সবুজগুলোকে ঢেকে দেয়ার জন্যে অগুন্তি নিশানের গৈরিক চিহ্ণ । মোতায়েন রয়েছে অসংখ্য ভলান্টিয়ার, উর্দি পরা নিরাপত্তা কর্মীদের দল। ল্যাম্পপোষ্টের প্লাকার্ডে লটকে আছে নেতাদের ছোটো বড়ো চেহারা। দম বন্ধ করা ভীড় , এই একটু আগেই ভাষণ চলার সময়ে এলইডির পর্দায় ভেসে আসছিল লম্বা জোব্বা পরিহিত এক রাষ্ট্রনায়কের বিশাল চেহারা , তার প্রতিশ্রুতিময় আশীর্বাদ বানী! এই যে দু’ঘন্টার মিটিং শেষ হলো , এর জন্যে রাজ্য জুড়ে চলছে চার সপ্তাহের প্রশাসনিক প্রস্তুতি। আপাতত এই মিটিং শেষ। সমাবেশ শেষ হতেই মন্ডপ ছেড়ে একে একে ফিরে যাচ্ছে ক্যাডার , শ্রোতা , সাধারণ পাবলিকের দল । ফিরে যাচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা মানুষজন। যারা যারা মিটিং-এ এসেছিলো তাদের সবাইকে ধরিয়ে দেয়া হয়েছিলো বি জ্ঞাপন আঁকা সুদৃশ্য গেরুয়া টুপি , নানা কিসিমের রঙ্গীন দিনের লিফলেট। তাই এখন যারা ফিরে ...